করোনায় মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২০
করোনায় অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে তাদের উদ্যোগগুলোকে কোনোমতে চালিয়ে রাখলেও তা ভালো যাচ্ছে না। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা আরও বাড়বে। আগে থেকে খেলাপি ঋণ কমাতে সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যে আঘাত হানার ফলে ব্যাংক খাতের মন্দঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে উদ্যোক্তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯ দশমিক ১ শতাংশ সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ৪ দশমিক ১ শতাংশ ডাউটফুল এবং ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দ মানের ঋণ। ব্যাংকের ভাষায় এই ঋণগুলোকে আদায় অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এর আগে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকায়। একই বছরের জুন শেষে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ও সেপ্টেম্বর শেষে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ছিল খেলাপি ঋণের পরিমাণ। অথচ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এই ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) ২২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়লেও শেষ তিন মাসেই (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ কমেছে ২১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপিদের নানা ধরনের ‘অনৈতিক’ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এতে প্রকৃত চিত্র আড়াল হয়ে গেছে। বিশেষ করে গণ-ছাড়ের আওতায় শীর্ষ ঋণ খেলাপিরা পুনঃতফসিল করেছেন বলেই অঙ্কটি এত কম দেখাচ্ছে।
এ পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক অবস্থার। সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে কর্মসংসংস্থান, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের গৃহিত বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে করোনা আঘাত হানতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আগে থেকে খেলাপি গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কারণে নতুন সুযোগ দেওয়ার কোনো পথও হয়তো আর খোলা থাকবে না।
উদ্যোক্তারা মনে করছে খেলাপি ঋণ যেভাবেই কমিয়ে রাখা হোক করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাণিজ্যে বারোটা বেজে গেছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহেই বন্ধ হয়ে গেছে দুই হাজারের অধিক শিল্প কারখানা। সাত শহরের বাইরের আরও কারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্য আছে যা বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরে কৃষি প্রক্রিয়াজাত করণ, পোলট্রি, মৎস্য ও গবাদি পশুপালন খাতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা আরও বড় হবে। আর এর প্রভাব পড়বে ব্যাংকে। এক্ষেত্রে শুধু খেলাপি ঋণই বাড়বে না, বছরাধিক কাল সময় ধরে অনদায়ী এ ঋণ মন্দ ঋণে পরিণত হবে।