ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেকর্ড ছাড়িয়েছে আন্তঃব্যাংক লেনদেন

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৮

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট আরও বেড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিত্যদিনের নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে নিজেদের মধ্যে লেনদেন (কলমানি) বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে লেনদেনের পরিমাণের পাশাপাশি সুদের হারও বেড়ে গেছে। লেনদেন উঠেছে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষের কেনাকাটা বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এ বাড়তি চাহিদা মেটাতে অন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না।
১৪ আগস্ট আন্তঃব্যাংক লেনদেন ছিল ১০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এ লেনদেন এ যাবতকালের সর্বোচ্চ লেনদেন। ১৪ আগস্ট কলমানি মার্কেটের সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল ৫ শতাংশ। সর্বনিম্ন রেট ছিল দশমিক ৭০ শতাংশ। আর কলমানির গড় হার ছিল ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কলমানির গড় সুদ হার বেড়েছে ১২৮ শতাংশ। আর লেনদেন বেড়েছে প্রায় আট শতাংশ। এক ৬ আগস্ট কলমানি মার্কেটে গড় সুদ হার ছিল ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল ৫ শতাংশ। আর মোট লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আন্তঃব্যাংক লেনদেন সব সময়ে আছে। ঈদের সময়ে একটু বেশি হয়। তবে এবার এর পরিমাণটা বেশি।’ তিনি বলেন, ‘তারল্য বৃদ্ধিতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা কাজে আসেনি। বিশেষ করে সরকারি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে পাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা কাজে আসেনি। এর প্রভাব কলমানি মার্কেটেও কিছু পড়েছে।’ ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট কলমানি মার্কেটের তথ্যে দেখা যায়, সে সময় মোট লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। ওইদিন সর্বোচ্চ কলরেট ছিল ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং গড় কলরেট ছিল ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কলমানি মার্কেটে লেনদেন বাড়লেও গড় কলরেট আগের চেয়ে কম আছে। অর্থাৎ সহনশীল কলরেটের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের অভাবে নিজেদের মধ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের লেনদেন করে থাকে। সাধারণত যে ব্যাংক বাজারে যত সুনামের সঙ্গে কাজ করে সেই ব্যাংককে গ্রাহক সামলাতে তত বেশি আন্তঃব্যাংক লেনদেন করে থাকে। একইভাবে তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যাংকগুলো অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে এ ধরনের লেনদেন করে থাকে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক কলমানি মার্কেটে অর্থের প্রধান জোগানদাতা। অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব ব্যাংকের কাছে থেকে ধার নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে নগদ অর্থের প্রশ্নে অস্থিরতা মধ্যে ছিল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক গত প্রায় এক বছর সময় ধরে তারল্য সংকটে ছিল। এ তারল্য সংকট প্রভাব ফেলে ঋণ বিতরণে। একদিকে বিনিয়োগকারী চাহিদামতো অর্থ পাচ্ছিল না। অন্যদিকে প্রতিযোগিতার কারণে সুদ হার বেড়ে যায়। ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের সমাধানে সরকার হস্তক্ষেপ করে। এ সময় বিআরআর (আমানতের নির্দিষ্ট অংশ; যা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়) ১ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের আমানত এত দিন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৭৫ শতাংশ রাখত। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রাখত ২৫ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সংকট দূর করতে সরকার বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ৫০ শতাংশ রাখার কথা ঘোষণা করে। তারপরও বেসরকারি ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়ার প্রবণতা কমেনি।

 
Electronic Paper