ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেসরকারি ব্যাংকে ‘নিরাপদ নয়’ সরকারি আমানত

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০১৮

সরকারি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে জমার হার বৃদ্ধি করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। মূলত নিরাপত্তার কারণেই আগের মতোই সেগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত রাখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংকমুখী হলেও তা মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ও বড় ব্যাংকগুলোর কাছে যাচ্ছে।

বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানতের অংশ বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার পর, ব্যাংকগুলোতে অনুসন্ধান করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সমস্যা সমাধান করতে সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০ ভাগ এসব ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ২৫ শতাংশ নিতে পারত। বাকি ৭৫ ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করত। ঋণ বিতরণে সুদ কমাতে ও তারল্য সংকট দূর করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সমান ভাগে করে দেয়। এর ফলে সরকারি আমানতের বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা আমানত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংরক্ষণের অধিকার পায়।
বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের বেসরকারি ব্যাংকে আসার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই অবস্থা।’ খোলা কাগজকে তিনি বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে এসব আমানতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংকে আসছে না। এক. আমানতের সুদ হার বেশি, দুই. প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেশি নিরাপদ মনে করছে।’   
জানা গেছে, সাধারণত কম সুদের এ আমানত সংগ্রহ করতে বলা হলেও বেসরকারি ব্যাংকের জন্যও সুদের হার ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংকমুখী হলেও এ আমানত পাওয়ার জন্য কিছু বেসরকারি ব্যাংক প্রতিযোগিতা করে সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে একদিকে সুদের হার যেমন বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বেশি সুদ নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে যে ব্যাংকগুলো বেশি যোগাযোগ করতে পারছে এবং বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে-সেগুলোই আমানতের বড় অংশ নিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললে সেখানকার দায়িত্বশীলরা সরকারি তহবিলের নিরাপত্তা ও চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার নিশ্চয়তার কথাই বেশি চিন্তা করছে-বলে জানায়। যোগাযোগ খাতে কাজ করে সরকারের এমন প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, ‘সুদ কত পাচ্ছি সেটা মুখ্য বিষয় নয়। টাকা নিরাপদে রাখতে পারছি কি না এবং দ্রুত পাব কি না, আমানত রাখার ক্ষেত্রে সে বিষয়টিই বেশি বিবেচনা করছি।’
জলবায়ু ট্রাস্টের বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটি টাকা রেখেছিল। ব্যাংকটি অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটলে সময়মতো চেয়ে আর টাকা পাচ্ছিল না জলবায়ু ট্রাস্ট। এতে জলবায়ু ট্রাস্টের কাজের বিঘ্ন ঘটে। বাইরে এর নেতিবাচক আলোচনা হয়, জলবায়ু ট্রাস্টের টাকা আটকে গেছে। বিষয়টি সংসদেও আলোচনা হয়। আমরা চাই না-এমন ব্যাংকের কাছে টাকা রাখতে-যে প্রতিষ্ঠান নিজেই আগে থেকে রুগ্ন হয়ে আছে। এ জন্য টাকা রাখার জন্য কোন ব্যাংক কত সুদ দিয়ে প্রতিযোগিতা করছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা ব্যাংকটি কেমন, বাজারে তার কেমন সুনাম আছে-সেটি।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা রাখার ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকার ক্ষেত্রে সরকারের ওপর মহল থেকে চাপ আছে, এমন ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে যাতে টাকা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। যদি এমন হয়, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা হলো সেই ব্যাংক অনিয়ম করে ঋণ বিতরণ করল। সে টাকা ওই ব্যাংকে ফেরত এলো না। সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা চেয়ে পেল না। এ ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কাজই থেমে গেল।
এ বিষয়ে একই কথা বলেন, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমানত বেসরকারি ব্যাংকে সমান রাখার কথা বলা হলেও সুদ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে একই। এ কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রথম পছন্দ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এরপরও কোনো প্রতিষ্ঠানের বেশি তদবির থাকলে এবং সেই তদবির ফিরিয়ে দিতে না পারলে সেই আমানত ভালো বেসরকারি ব্যাংকের দিকে যাচ্ছে। মধ্যম ও মন্দমানের ব্যাংকগুলোর এতে কোনো লাভই হচ্ছে না।’

 
Electronic Paper