ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাসা গ্রুপ ও এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম

হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০

দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কারণে নানা অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে নাসা গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ার কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। এর মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকার অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি ‘টক অব দ্য নাসা গ্রুপে পরিণত হয়েছে। অনিয়ম অভিযোগের কারণ অনুসন্ধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানির  আড়ালে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ পাচার হয়েছে কি-না সে প্রশ্নও উঠেছে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বিষয়টিও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নাসা গ্রুপের কর্ণধারও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার। এছাড়া ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-এর (বিএবি) সভাপতি।

সূত্র জানায়, দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে পর পর চার বছর নাসা গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ইউনিট ঋণের সীমা অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ বছরে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার সীমা নির্ধারিত রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি তার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নাসা গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ইউনিট বিভিন্ন সময়ে এই সীমা অতিক্রম করেছে। ২০১৫ সালে টেক্সটাইল ইউনিট ১৪৫ কোটি টাকা ঋণ সীমার বিপরীতে ঋণ নিয়েছে ৩৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে প্রায় ২০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬ সালে ২৯ কোটি ও ২০১৭ সালে  প্রায় ১৩ কোটি টাকা সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। অন্যদিকে গার্মেন্ট ইউনিট ২০১৭ সালে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে ১১৯ কোটি ও ২০১৮ সালে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে ৫৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানির সুযোগ পায়। সাধারণত রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হলে আমদানির চাইতে রপ্তানি বেশি হয়। কিন্তু চার বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নাসা গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ইউনিটের আমদানির চাইতে রপ্তানি কম হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে টেক্সটাইল ইউনিট আমদানির চেয়ে রপ্তানি কম করেছে ২১২ কোটি টাকা। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে তা যথাক্রমে ৪৭ কোটি ও ৩৬ কোটি টাকা। একইভাবে গার্মেন্ট ইউনিট ২০১৫ ও ২০১৭ সালের আমদানির চেয়ে রপ্তানি কম করেছে যথাক্রমে ৯৪ কোটি ও ১১ কোটি টাকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট। এতে বাড়তি আমদানি দেখিয়ে অর্থপাচার হয়েছে কিনা তা এখন আলোচনায় এসেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে শক্তিশালী তদন্ত করা হলে এর সঙ্গে আরো কী কী অনিয়ম রয়েছে কিংবা এর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, তা বেরিয়ে আসতে পারে।

বন্ড জালিয়াতির এমন চক্রের সন্ধানে অক্টোবর থেকে অভিযান চালাচ্ছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বন্ড জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে একটি বড় সিন্ডিকেট। তালিকায় আছে শতাধিক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান। সিন্ডিকেটে জড়িত তিন জন বড় মাপের ব্যবসায়ী এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোনো মুহূর্তে তারা গ্রেফতার হতে পারে বলে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আবাস দিয়েছে।

রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা পুনরায় রপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। বন্ড লাইসেন্সের নামধারী চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা সে সুযোগের অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত পণ্য ফ্রি-স্টাইলে বিক্রি করছেন কালোবাজারে। এ কারণে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে  নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামে সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 
Electronic Paper