ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২০

করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেই সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য উচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করতে যাচ্ছে। নতুন বছরের জন্য বাজেট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন আভাস মিলেছে।

এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা এক রকম অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজস্ব খাতের প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও কর ফাঁকি রোধে দরকারি বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন। তা না হলে বড় লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে বড় ঘাটতির ধকল সামাল দিতে হবে। 

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পরে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৬০০ কোটি টাকা করা হয়। ওই লক্ষ্য সামনে রেখে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চে) আদায় করা গেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা মাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় বাকি ৩ মাসে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে রাজস্ব আয় যে কম হবে তা স্পষ্ট। এ অবস্থায় আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থ শুধু লক্ষ্য স্থিও করলে হবে না, তা সংগ্রহ করতে হবে। আর তার জন্য অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামগ্রিক পরিবেশটা ঠিক থাকতে হবে। এ বছর যে ট্যাক্সগুলো দেওয়া হবে, সেটা ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আগামী বছর কম হবে। এর মূল কারণ, ব্যাংকগুলো মুনাফা করেনি। অন্যান্য করপোরেট খাতের মুনাফা করার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা লোকসান করছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী বছর কোন বিবেচনায় ৩৬ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরছি সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।

আগামী অর্থবছরে বিপুল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ড সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সবেচেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মুসক-এ। মুসক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ২০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ৬৮ শতাংশই আশা করা হচ্ছে পরোক্ষ কর থেকে। এই অর্থবছরে যা ছিল ৬৫ শতাংশ।

করোনা ভাইরাসের কারণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে আমদানি রপ্তানি স্মরণকালের বিপর্যয় হয়েছে। কমে গেছে উৎপাদন ও বিপনন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আগামী অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস এ অবস্থা থেকে বেরুনো কঠিন হবে। সে সময় মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারলেও উৎপাদন, বিপনন ও ভোগ কতটা স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। এ অবস্থায় প্রেক্ষাপটে রাজস্বের প্রধান দুই অংশ মূসক ও শুল্ক আদায়ের লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে না। সরকারের বড় রাজস্ব দাতা হলো ব্যাংক বীমাগুলো। ব্যাংকগুলো এবার লাভের মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে সরকার এপ্রিল মে দুই মাসের সুদ ব্লক রাখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রণোদনা ঘোষণা ও ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে তা বিতরণে সরকার লক্ষ্য ঠিক করলেও তা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

অন্যদিকে করোনা আঘাতের ফলে আয়কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। আয়করের প্রধান উৎস সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারি ও বেসরকারি বড় ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোগুলোর বেতন-ভাতা। করোনা আঘাত পরবর্তি সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান ট্যাকে ফেরার চেষ্টা করবে। ফলে তাদের বেতন ভাতা ঠিকই দেওয়া হবে। যার ইতিবাচক প্রভাব আয়করে পড়ার সম্ভাবনা দেখছে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন শুধু আয়করই নয়, চলতি অর্থবছরের শেষ ভাগ করোনাভাইরাসের আঘাত নিয়ে শেষ হবে, আর ২০২০-২১ অর্থবছর শুরু হবে করোনাভাইরাসের বিপদকে পেছনে ফেলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য আদায়ে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

 
Electronic Paper