উন্নয়ন বাজেট বাড়ছে মাত্র ৩ শতাংশ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১১:১৬ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২০
করোনাভাইরাস কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব বাংলাদেশের বাজেটেও এবার প্রবলভাবে পড়ছে। রাজস্ব কমে যাওয়া, আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নগতির পেক্ষাপটে উন্নয়ন বাজেট ছাটকাট করতে হচ্ছে। ফলে অতীতে উন্নয়ন বাজেট ১৫-১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হলেও এবার সে হার ধরে রাখা যাচ্ছে না। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৩ শতাংশের মতো বেশি। অথচ আগের বছরগুলোতে উন্নয়ন বাজেট ১৫-১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতো। সেখানে এবার বাড়ছে মাত্র ৩ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের কারণে জীবন রক্ষা বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে উন্নয়ন কর্মসূচি কী হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করে বেঁচে থাকা। পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর খোলা কাগজকে বলেন, এখন সারা বিশে^র মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। দেশে দেশ মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এজন্য এখন বড় আকারের এডিপি না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট দেওয়া বেশি জরুরি।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে প্রকল্প সংখ্যাও কমানো হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি প্রকল্প। ফলে নতুন অর্থবছরে প্রকল্প কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন। করোনাভাইরাস কভিড-১৯ এর কারণে দেশেব্যাপী লকডাউন চলছে। কার্যত পুরো দেশ এখন ছুটিতে আছে। আয় নেই, ব্যয়ও কমেছে। এজন্য চলমান প্রকল্পগুলো আশানুরূপ বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে প্রকল্প সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা এডিপির খসড়া অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় গতকাল উঠেছিল।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, করোনার কারণে এ বছর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ অন্য বছর যেমন সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ডেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্প সংখ্যা নির্ধারণ করা হতো। এবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বন্ধ। তারাও ঠিকমতো প্রকল্প সংখ্যা দিতে পারেনি। সব কিছু মিলেই প্রকল্প সংখ্যা কমছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাদে)। পরে সংশোধনের মাধ্যমে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের করোনা আঘাতে এডিপি বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে। অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাস ঠিকঠাক চলেছে। তারপরের চার মাস এডিবি বাস্তবায়ন শূন্যের কোটায়। সে হিসাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিশ^ব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, এটা ৩ শতাংশের বেশি হবে না। এডিবি অবশ্য বলেছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৭ শতাংশের বেশি। অবশ্য এডিবি যখন পূর্বাভাস দেয় তখনো কভিড-১৯-এর মহামারী প্রকোপ বাংলাদেশে শুরু হয়নি।
এদিকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কভিড-১৯-এর প্রভাবে তা অব্যয়িত রয়েছে, সে অর্থ ইতোমধ্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় খরচ করার জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজেও করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এডিবির সংখ্যা বা বরাদ্দ কমলেও মেগা প্রকল্পের বরাদ্দে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অগ্রাধিকার প্রকল্পে চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা-পরবর্তীতে অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে মেগা প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।