ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুুদ স্থগিত হওয়ায় ব্যাংকে সংকট দেখছেন নির্বাহীরা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, মে ০৪, ২০২০

করোনা ভাইরাসের অভিঘাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। চলছে সাধারণ ছুটি। কারখানায় উৎপাদন নেই, আমদানি-রপ্তানি তলানিতে। ব্যাংক-বীমাও চলছে সীমিত পরিসরে, কার্যত বন্ধ। তৈরি পোশাক শিল্প কোনোমতে চালুর চেষ্টার মধ্য দিয়ে রপ্তানির উদ্যোগ নিলেও পদে পদে পড়তে হচ্ছে প্রতিবন্ধকতার মুখে। মুখ থুবড়ে পড়েেছ দেশের অর্র্থনীতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এপ্রিল-মে দুই মাসের ঋণের সুদ স্থগিত করার রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ উদ্যোগকে উদ্যোক্তারা স্বাগত জানালেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে সতর্ক প্রতিক্রিয়া করছে। তারা বলছেন, সুদ বন্ধ হলে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়বে।

করোনাভাইরাসের ভয়াল গ্রাসে বিশে^র শিল্পোন্নত বড় বড় দেশ আজ বিপর্যস্ত। এসব দেশে সব কিছু থমকে গেছে। জীবন বাঁচানো তাদের প্রথম ও একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এরই মধ্যে সরকারগুলো নানা রকম প্রণোদনা ও উদ্যোগ নিয়েছে। বৈশ্বিক ব্যবসা বাণিজ্য ও উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ এ মহামারি থেকে রক্ষা পায়নি।

প্রতিদিনই ৫০০-৬০০ করে আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন মানুষ। এ অবস্থা মোকাবেলায় সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থনীতিতে এক গভীর অমানিশা অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা মোকাবেলার জন্য সরকার ৭২ হাজার টাকার প্যাকেজ ঘোষণার পর গত পরশু এপ্রিল-মে দুই মাসের সব ঋণের সুদ স্থগিত করে।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিজিএমইএ-এর পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, করোনভাইরাসের কারণে গত দুই মাস ধরে কোনো ব্যবসা বাণিজ্য নেই। উৎপাদন, বিপণন নেই। কবে শুরু হবে তাও বলা কঠিন। এ সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ বোঝা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তারা আরও বেশি কিছু আশা করেছিল। তারপরও বাংলাদেশ যে ঘোষণা দিয়েছে এর ফলে কিছু স্বস্তি আসবে। ব্যাংকগুলোও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানাবে বলে আমরা মনে করছি।

আফিস ইব্রাহিম মনে করছে, গত বছরগুলোতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করে বড় ধরনের মুনাফা করেছে। দেশের খারাপ অবস্থায় দুই মাসের সুদ স্থগিতের ঘোষণাকে ব্যাংকগুলো ভালোভাবে নেবে, সহায়ক হিসাবে বিবেচনায় নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘোষণাতে সতর্ক প্রতিক্রিয়া করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তাদের মতে, ব্যাংকগুলোর চলার একমাত্র অবলম্বন হলো আমানতের সুদ। এ ঘোষণার ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বন্ধ করার ইঙ্গিত করেছে।

নাম না প্রকাশ করে বেসরকারি একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোলা কাগজকে বলেন, এ ঋণের সুদের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন হয়। আমানতকারীকে সুদ দিতে হয়। তারপর তাদের আমানতের সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হয়। সুদ না এলে ব্যাংকগুলোকে আমানতের অর্থ খরচ করে চলতে হবে। গ্রাহকরা আস্থা হারাবে। ব্যাংক খাত সংকটে পড়বে।

সুদ স্থগিতের বিষয়টিকে সংকট উত্তরণে সরকারের একটি উদ্যোগ; এর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও ঘোষণা আসবে বলে মনে করেন অপর বেসরকারি বাণিজ্যিক পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে একটি ক্রাইসেস পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। নিশ্চই এ সম্পর্কিত আরও ঘোষণা আসবে। সেখানে সুদ স্থগিত হওয়ার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিকল্প ঘোষণা থাকবে। ততদিন মন্তব্য করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এমন যদি হয় যে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করবে ইন্টারেস্ট আসবে না, তাহলে ব্যাংকগুলোকে লোকসান দিতে হবে।

দুই মাস সুদ স্থগিত হওয়ার ফলে ব্যাংকে অর্থ আসার অন্যতম একটি বড় পথ বন্ধ থাকবে। দেশে করোনাভাইরাস রোধে ঘোষিত লকডাউন অর্থনৈতিতে স্থানান্তর হওয়ার ফলে আমানত আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। রেমিট্যান্স নেমেছে দুই-তৃতীয়াংশে। এতে তারল্য সংকটের আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এ প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার কারণে ইতোমধ্যে বিতরণযোগ্য অর্থের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আগে তারল্য সমস্যা থাকলেও এখন আর সে ধরনের সমস্যা নেই।

ব্যাংকে তারল্য থাকলেও এখন এ ঋণ নেওয়ার কেউ নেই বলে মনে করেন নীট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত উদ্যোক্তাদের এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে বিনিয়োগ করার কথা কেউ ভাবতেই পারছে না। এ মুহূর্তে সুদের টাকা দেওয়া যেমন সম্ভব নয়, ঋণ নিতে যাবে তেমন উদ্যোক্তাও পাওয়া যাবে না।

 
Electronic Paper