ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শর্তের বেড়াজালে প্রণোদনা

মহামন্দায় ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান

জাফর আহমদ
🕐 ১১:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২০

করোনা মহামারি আকার ধারণ করার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে লকডাউনে বন্ধ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আয় রোজগার উৎসারি কার্যক্রম। আর এতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও এ সব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। জীবন বাঁচাতে পুঁজি ভেঙে চলতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকার উদ্যোগ নিলেও সহায়ক নীতি না থাকা ও শর্তের বেড়াজালে তা কতটা সফল হবে তা নিয়েও সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৬ লাখ, আর এতে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ কর্মরত। করোনাভাইরাস দুর্যোগের ছোবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ সব মানুষ। পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, এ সব প্রতিষ্ঠান একদিকে নিজেদের কর্মসংস্থান করেছে অন্যদিকে অন্যদের কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রেখেছে। দেশব্যাপী ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো হলে লকডাউনের ফলে কর্মসংস্থান ও ভোক্তা ‘সিস্টেম’ এ যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা কেটে যাবে।

এসএমই খাতে করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। গ্রাহক পর্যায়ে এ ঋণের সুদ হার হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। এ প্রণোদনা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক। তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পসহ অধিকাংশ পরিচিত শিল্পগুলো এসইমএই খাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে এই প্রণোদনা পুনরায় আগের গ্রাহকদের কাছেই চলে যাবে।

পরবর্তী সময়ে সরকার এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার মধ্য থেকে ভিন্ন করে তিন হাজার কোটি টাকা বিতরণের জন্য ঘোষণা করেছে। যা এনজিওগুলো ব্যাংকের কাছে নিয়ে থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদ হারে বিতরণ করবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর খোলা কাগজকে বলেন, এ ঋণের সুদহার কিছুটা বেশি হলেও এনজিও এর কাছে থেকে আগে নেওয়া ঋণের সুদ হারের চেয়ে কম। তবে তা নির্ভর করবে গ্রাহকের ঋণ দেখে শুনে নেওয়ার ওপর। ক্ষুদ্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এ তহবিল চাহিদার তুলনায় কম হওয়া ও ঋণ নিতে ব্যাংক ও এনজিওর সঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্কের কথা উল্লেখ থাকার কারণে এক্ষেত্রেও ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো এ তহবিল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

সরকারের এ প্রণোদনা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সন্দিহান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাংক-এনজিও এর সঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সব প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেওয়া হবে। কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগগুলোর ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

কিছু প্রতিষ্ঠানের এনজিও-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এ সব প্রতিষ্ঠান কোনো সুবিধা পাবে না। ফলে করোনাভাইরাসের বহুমুখি ক্ষতি মোকাবেলার জন্য সরকার কম সুদের ঋণ ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা ছোট্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কাজে আসবে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলা করতে হলে এ সব উদ্যোক্তাকে নীতি ও সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ বিষয়ে বিআইডিএস-এর গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত খোলা কাগজকে বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ ক্ষুদ্র গ্রাহকরা নিয়ে সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে ‘ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক’ সম্পর্কিত নির্দেশনা। আর পিকেএসএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করলেও এর সফলতা নির্ভর করবে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছা ও গ্রাহক সচেতনতার ওপর।

 
Electronic Paper