সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দৃষ্টি দিতে হবে
জাফর আহমদ
🕐 ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৫, ২০২০
দেশে করোনা ভাইরাস দুর্যোগ চলছে। রপ্তানি আয় কমে গেছে। প্রবাসী আয়ে বড় ধরণের ধাক্কা পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বিশেষ নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যের অংশ। বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস তাণ্ডবের মধ্যেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় করতে হবে। এ জন্য করোনা মাকাবেলা, ট্রেড, মৌসুমি কৃষির পাশে দাঁড়ানো, কাজ হারা মানুষের মধ্যে খাদ্য সরবরাহের কাজগুলো করতে হবে। করোনা ভাইরাস অভিঘাত ও করনীয় বিষয়ে দৈনিক খোলা কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান দুই খাতে আয় ঝুঁকির মধ্যে। ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশ একা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে না। এ অবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রাখতে হবে। বোরো মৌসুমে প্রায় দুই কোটি টন খাদ্য উৎপাদন হয়। এই ধানের প্রায় ১১ শতাংশ আসে দেশের পূর্বাচলের হাওরাঞ্চলের ১১ জেলা থেকে। এই ধান দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরণের ভূমিকা রাখলেও বড় ধরণের ঝুঁকি নিয়ে চলে। একই সময়ে পাহাড়ি ঢল নেমে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ ঢল থেকে রক্ষা করতে বাধগুলো মেরামত ও ধান সময়ে কেটে ঘরে তোলা প্রয়োজন। ২০১৭ সালের বিপর্যয় আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে। এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধে মাইগ্র্যান্ট শ্রমিক দিয়ে এবারও ধান কেটে দ্রুত কৃষকের ঘরে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অন্য অঞ্চলে থেকে ট্রাকে-বাসে বিশেষ ব্যবস্থায় শ্রমিক নিয়ে এসে ধান কেটে ঘরে তুলতে সরকার কৃষককে সহায়তা করা যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারকে করোনা মোকাবেলার উপযোগি সিদ্ধান্ত নিতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের হাতে কাজ নেই। কাজ নেই তাই আয়ও নেই। এর বাইরে রয়েছে আরও হতদরিদ্র মানুষ। এই বিবেচনায় প্রায় এক কোটি মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এ সব মানুষের তালিকা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খাদ্য সরবারহ করতে হবে। নোঙ্গরখানা খুলে মানুষের জন্য খাদ্য সরবারহ করা যেতে পারে। এটা করতে সরকারের মজুদকৃত চাল ছেড়ে দিয়ে বাজার থেকে নতুন চাল সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে বড় আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনা নির্ণয় করা ধীর গতিতে চলছে। এতে এক ধরণের অবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের স্বাস্থ্য সেবার করুন চিত্র তুলে ধরে বলেন, সরকারের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে স্বাস্থ্য খাতকে বেসরকারি খাতে আরও বেশি করে উন্মুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় তেলের দামে ধস নেমেছে। এর ফলে তেল সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ নির্ভর প্রবাসী আয়ে বড় ধরণের আঘাত লেগেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দলে দলে দেশে ফিরে আসছেন। রেমিটেন্স ও বৈদেশিক মূদ্রার প্রধান খাতটি বিপর্যস্ত প্রায়। আগামীতে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও খারাপ অবস্থা তৈরি হতে পারে। ইতিমধ্যে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। অথচ ট্রেডে নির্ভর করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এসব ট্রেডে এখন লকডাউন চলছে। এই ব্যবসা বাণিজ্য খুলে দিলেও এখন গ্রাহক পাওয়া যাবে না। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ জন্য আভ্যন্তরীণ ট্রেডকে রক্ষা করতে সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা ঘোষণা করতে হবে, সহায়তা নিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
দেশের শিল্প কারখানার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে অনেক কারখানার মেশিন অলস ফেলে রাখতে হবে। এসব মেশিন-পত্র সচল রাখা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সরকার শ্রমিকদের মজুরির জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করেছে। প্রণোদনাও ঘোষণা করেছে।
শিল্প কারখানা ও শিল্প উদ্যোগগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করবে। এর জন্য সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।