ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবস্থান পাল্টায়নি এনবিআর

সাজেদুর রহমান
🕐 ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনার চাকতি মিশ্র ধাতুতে পরিণত হওয়া এবং ২৪ ক্যারেটের উচ্চমানের সোনা ২০ থেকে ১৮ ক্যারেটে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের হয়ে যাওয়া নিয়ে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অর্থ প্রতিমন্ত্রী এখনো বলছেন, ভল্টে স্বর্ণ ঠিক আছে, এনবিআর যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা ভুল। অপরদিকে এনবিআর তাদের অবস্থানে অনড় আছে, পাল্টায়নি প্রতিবেদনের তথ্য।

এ বিষয়ে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেই প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এখানে ভুল হওয়ার অবকাশ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যথাযথভাবে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছি এবং গত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। পরিদর্শনদল ভল্টে রাখা সোনার যাচাই-বাছাই শেষে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ ছিল একটি সোনার চাকতি ও আংটি নিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘সেই তদন্তে উদ্ঘাটিত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও ৬ মাসেও কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যাখ্যা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শনদল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে, ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রণে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পরিদর্শনদল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া সোনা যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, সোনার অলঙ্কার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশিরভাগের ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্য টাকা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। সোনার ক্যারেটের তারতম্য ঘটানোর কারণে সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আধা-সরকারি পত্র পাঠিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান ও ভল্টের দায়িত্বে থাকা আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘স্বর্ণ যখন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জমা রাখেন তখন সনাতন পদ্ধতিতে পরিমাপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যখন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পুনরায় পরীক্ষা করতে আসেন তখন পরিমাপে ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতির মাপন যন্ত্র।’ তারা গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলায় ৪০ লিখতে গিয়ে ইংরেজিতে ৮০ হয়ে গেছে। তবে স্বর্ণ গ্রহণের সময় সনাতন পদ্ধতি আর পরীক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির মাপন কেন-এ প্রশ্নের জবাব বাংলাদেশ ব্যাংক এড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এক বছর ধরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি এজেন্সি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে চিঠি চালাচালি করলেও এর সুরাহা না হওয়ার বিষয় নিয় প্রশ্ন তোলেন খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ব্যাংকাররা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান খোলা কাগজকে বলেন, ‘সব ঠিক আছে। দুটি সংস্থার মধ্যে হিসেবে গরমিল হয়েছে। আমরা সেটার সমন্বয় করছি।’ এদিকে এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দিয়েছি হিসেবের যর্থাথতা বজায়ে রেখে কাজ করেছি। তবে মন্ত্রণালয় যদি চায় তবে তা আবার করা যেতে পারে।

 
Electronic Paper