ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেসিক ব্যাংক খেলাপি অর্ধেকে নামাতে চায়

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। যে সব ব্যাংক গ্রাহক ঋণ নিয়ে বিভিন্ন কারণে ফেরত দিতে পারেনি, খেলাপি হয়ে গেছেন, তাদের দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায় বেসিক ব্যাংক। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত এই বাণিজ্যিক ব্যাংক মনে করছে খেলাপি ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ ৭৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, যে সব ভাল গ্রাহক অনিচ্ছাকৃত খেলাপি, হয়তো কোনো কারণে খেলাপি হয়েছেন, আমরা চাই তারা আবার ব্যবসায় ফিরে আসুন। যারা পুনঃতফসিল করছেন ব্যাংক তাদের কাছে থেকে শুধু ঋণ আদায়ই করবে না, প্রয়োজনে আবার ঋণ দেবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমবে। গ্রাহকরা আবার ব্যবসায় ফিরে আসবেন। খেলাপি ঋণের দুর্নাম ঘুচে যাবে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক পর্যন্ত হিসেবে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৯০৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংক খেলাপি ঋণ ৭৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমিয়ে এনেছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেই সুযোগের আওতায় এই খেলাপি ঋণ কমেছে। চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ কমার কারণে সুফল মিলেছে প্রভিশন ঘাটতির ক্ষেত্রে। তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি কমেছে ৫২ কোটি টাকা।

প্রভিশন সংরক্ষণ হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা ব্যাংকগুলোতে সংরক্ষণ করা। খেলাপি ঋণ তিন ধরনের। সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা প্রাথমিক মানের খেলাপি ঋণ; ডাউটফুল বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণ এবং ব্যাড এন্ড লস বা মন্দমানের খেলাপি ঋণ। তিন ধরনের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলাকে তিন ধরনের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

প্রভিশন সংরক্ষণ সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ পরিশোধ করতে তিন মাস ব্যর্থ হলে তাকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড খেলাপি ঋণ বলা হয়। আর এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। ছয় মাস ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে ঋণকে ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণ বা মধ্যমমানের খেলাপি ঋণ বলা হয়।

এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর ৯ মাস অতিবাহিত হলে ওই সব ঋণকে মন্দ ঋণ বলা হয়। আর এ মন্দ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার প্রজ্ঞাপন জারি করার পর খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি দুই-ই কমেছে।

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা ব্যাংক ও গ্রাহক দুপক্ষের জন্যই আর্শীবাদ হিসাবে দেখছেন বেসিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এই প্রতিবেদক ব্যাংকটির রাজধানীর তিনটি শাখা ঘুরে আসেন।

এসব শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেছেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে একটা দুর্নাম আছে। কিন্তু অনেক গ্রাহক আছেন যাদের দিকে একটু সহায়তার হাত বাড়ালে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট তাদের জন্য আর্শীবাদ হিসেবেই এসেছে। এখন অনেক গ্রাহক প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে পুনঃতফসিল করতে আসছেন। আবার আমরাও খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনঃতফসিল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

বেসিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র খোলা কাগজকে বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সুবিধার আওতায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অর্ধেক নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। বর্তমান খেলাপি ঋণের হার ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। পুনঃতফসিল করার মেয়াদ শেষে এ হার দাঁড়াতে পারে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি যা হতে পারে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের অন্য একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ব্যাংকটির গুলশান শাখায় প্রায় ৯০ জন খেলাপি। এর মধ্যে ৪৫ জনেরও বেশি ইতোমধ্যে পুনঃতফসিল করার আবেদন করেছেন। আবেদনের সময় বাড়ানোর ফলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলাপি গ্রাহকরা আবেদন করতে পারবেন। আশা করা যাচ্ছে আরও আবেদন আসবে। প্রায় একই অবস্থা শান্তিনগর ও মতিঝিল শাখার।

এদিকে গ্রাহকদের মাঝেও অসন্তোষ আছে। অনেকে দুই মাস আগে শর্ত মেনে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে আবেদন করলেও তাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের টাকা জোগাড় করে এখন আর শেষ ব্যবসাটুকু আর চালিয়ে নিতে পারছেন না।

এ বিষয়টি নিয়ে বেসিক ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, যাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আলোর ঝিলিকের মুখোমুখি হলেও কিছু গ্রাহক হতাশা তৈরি করছেন। পুনঃতফসিল করার জন্য ব্যাংক থেকে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে তারা বিদেশে চলে গেছেন। তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোন লাভ হচ্ছে না। এসব গ্রাহক ফিরে এলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যশা ছাড়িয়ে যেত।

 
Electronic Paper