ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলাদেশ ব্যাংকে বিরল ঘটনা

৩ কোটি টাকার স্বর্ণ গরমিল; পরিমাপে সেই সনাতন পদ্ধতি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের ভুতুড়ে কাণ্ডের পর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, স্বর্ণ ভল্ট থেকে খোয়া যায়নি। স্বর্ণের ক্যারেট ২৪ থেকে ১৮ নেমেছে ব্রিটিশ প্রিয়ড থেকে অনুসরণ করা সনাতন পরিমাপ পদ্ধতির কারণে। যা পরবর্তীতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের আধুনিক পরিমাপ পদ্ধতি অনুসরণে চিহ্নিত হয়।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান একথা জানান। রাষ্ট্রের সম্পদ হেফাজতের দায়িত্বে থাকা আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের কাজ দায়িত্বহীনতা কি না, খোলা কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ‘এতদিন এভাবেই চলছে। কর্তৃপক্ষ পরিমাপ পদ্ধতি আধুনিক করার নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরবর্তীতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের আধুনিক পরিমাপ পদ্ধতি অনুসরণের কারণে ক্যারেট কমেছে।
এর আগে গতকালই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে ভয়াবহ অনিয়ম পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক করা স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার সময় ২৪ ক্যারেটের রাখা হলেও পরবর্তীতে তা ২০ থেকে ১৮ ক্যারেট পাওয়া যায়। স্বর্ণে মিশ্র ধাতু মেশানোর ফলে মোট ৩ কোটি টাকার মূল্যের স্বর্ণালঙ্কারে গড়মিল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে। বোঝা যাচ্ছে, ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে।’ তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘যারা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তারাই যদি গড়মিল করেন তবে খুবই আশঙ্কার কথা। এতে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই মানুষের আস্থা কমে যাবে।’ তিনি তার কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এসব কাজে যেসব দায়িত্বশীলরা আছেন তাদের বড়মাপের গাফিলতি আছে।’
জানা যায়, ২০১৫ সালে কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের চাকতি এবং আংটি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তিকে দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করলে তাতে স্বর্ণ পাওয়া যায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল স্বর্ণের চাকতি ও আংটি, তা হয়ে আছে মিশ্র বা শংকর ধাতু। এরূপ সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকাল ৫টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী ও দেশের রিজার্ভ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণের হিসাব গড়মিল নিয়ে পত্রিকার রিপোর্টকে ভুল বললেও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের স্বর্ণ পরিমাপ করার আগে কেন জানানো হয়নি এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।   
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান বলেন, ‘স্বর্ণ হেরফের হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এটা শুল্ক গোয়েন্দার নিজস্ব রিপোর্ট। এই রিপোর্টের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নাই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মেশিনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মেশিনের মাপের পার্থক্য হয়। এনবিআরের মেশিন আধুনিক মানের। সেটাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। যেসব স্বর্ণ নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাই করার আবেদন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে হালকা করে দেখার কিছু নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক চ্যালেঞ্জ করে যে কথা বলছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলছে, তৃতীয় পক্ষ দিয়ে যাচাই করতে হবে। এই তৃতীয় পক্ষটা কে? বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর দুপক্ষের সমঝোতায় অন্য কোনো পক্ষ নাকি আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষ এই বিষয়টি পরিষ্কার করেনি। আরেকটি ব্যাপার, যখন স্বর্ণালঙ্কার নেওয়া হয়েছে তখন কাদের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। তাদের আবার তলব করে দেখতে হবে সে সময়ে তারা যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে কাস্টম না বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাক্ষর করেছিল। এই জায়গায় মূল সমস্যা ধরা পড়বে।’
এনবিআরের সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির সময় বলেছিলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ না কেউ জড়িত না থাকলে এই অপকর্ম হতে পারে না। অথবা ব্যাংকের লোকজন অদক্ষ। এ ক্ষেত্রেও আমি একই কথা বলতে চাই, এই কাজে ব্যাংকের লোকজন জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয়।’
সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘পরিদর্শন প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে, সে তথ্য থেকে ঘটনার সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে। ঘটনাটিকে ছোট ভাবার কারণ নেই। ভল্টের মতো উচ্চ গুরুত্বের জায়গায় এমন অনিয়মকে গুরুত্ব না দিলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’

 
Electronic Paper