ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কিছুতেই প্রাণ ফিরছে না পদ্মা ব্যাংকে

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০১৯

কোনো ওষুধই কাজে আসছে না অধুনালুপ্ত ফারমার্স ব্যাংকে। নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক নাম রাখা, সরকারের ব্যাংকের কোষাগার থেকে অর্থ সরবরাহ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঝানু ঝানু ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে কোনো কাজে আসেনি। প্রতিটি সূচকে অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেই পদ্মা ব্যাংকের এই করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশ। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের বেড়েছে ১৩০ ভাগ। ২০১৮ সালের ৩০ জুন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের ৩০ জুনে এসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ এক লাফে দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ব্যাংকটিতে আমানত যখন ক্রমোবর্ধমান হারে কমছে। তখন খেলাপি ঋণ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

২০১৮ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২১ কোটি ১৪ লাখ টাকা; ডিসেম্বরে হয় ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ২০১৯ সালের জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এই খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের হারও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ২০১৮ সালের জুনে যেখানে মন্দ ঋণের হার ছিল ৭৭ শতাংশ, ২০১৯ সালের জুনে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ শতাংশ।

ব্যাংকটি ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক নাম ধারণ করার পর আশা করা হয়েছিল আমানত আরও বাড়বে। ব্যাংকটি থেকে অব্যাহতভাবে আমানত তুলে নেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার তিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে প্রায় আটশত কোটি টাকা মূলধন সরবারহ করেছিল। সে সময় মনে করা হয়েছিল নাম পরিবর্তন ও ব্যাংকের মালিকানায় সরকার এলে গ্রাহকরা নতুন করে ব্যাংকটির প্রতি আস্থা ফিরে পাবে।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ফারমার্স ব্যাংক থেকে নতুন নামে যাত্রা শুরু করে পদ্ম ব্যাংক। কিন্তু কোন দাওয়ায়ই কাজে আসেনি। বরং যত দিন গেছে গ্রাহকরা তত বেশি করে টাকা তুলে নিয়ে ব্যাংকটিকে ত্যাগ করেছে।

২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এক বছরে আমানত হ্রাসের হার প্রায় ১৬ শতাংশ।

গ্রাহকদের পদ্মা ব্যাংক বিমুখের ভয়ঙ্কর ছায়া পড়েছে সবগুলো শাখাতে। ২০১৮ সালের জুন মাসে যেখানে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ২৯টি, ছয় মাস পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ১৩টি বেড়ে ৪২টিতে উন্নীত হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আরও ১০টি বৃদ্ধি পেয়ে লোকসানি শাখা দাঁড়ায় ৫২টিতে। অর্থাৎ মোট ৫৬টি ব্যাংক শাখার মধ্যে ৫২টি শাখাই এখন লোকসানি।

এ ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যেও এখন হতাশা। না পারছে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে, না পারছে অন্য ব্যাংকে নতুন করে চাকরি নিতে। অন্য কোথাও চাকরি করতে গেলে ফারমার্স ব্যাংকের কর্মী নাম শুনলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের নিষ্প্রাণ স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে।

অব্যবস্থা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কারণে প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর থেকেই ব্যাংকটি অবস্থার অবনতি হতে থাকে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পায়; নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংকটিতে থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ব্যাংকটির সাথে যুক্ত কিছু রাঘব বোয়ালের নামও উঠে আসে। এ জন্য বারবার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়, আবার পুনর্গঠনও করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি হয়।

গ্রাহকরা আমানত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিদিনই শাখাগুলোতে ভিড় জমায়। শেষে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অপর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৮শত কোটি টাকা মূলধন নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু বছরের অধিক সময় অতিক্রম করলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক। বরং আগের চেয়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

 
Electronic Paper