ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এলএনজি সংযোগ নিয়ে সংকটের শঙ্কা

ছয় দফা পেছানোর পরও সময়ের আবেদন!

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০১৮

আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে সংযোগ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এক্সিলারেট এনার্জি ছয় দফা সময় নির্ধারণ করেও জাহাজ থেকে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযুক্ত করতে পারেনি।

উপরন্তু নতুন করে আরও এক মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে সংস্থাটি। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে এই সময় বাড়ানোর আবেদন করে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এতটা সময় দিতে রাজি হয়নি।
পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে খোলা কাগজকে বলেন, ‘এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এক্সিলারেট এনার্জির কারিগরি সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  তারা ১০ মে থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ছয়বার নির্ধারণ করেও কথা রাখতে পারেনি। সংস্থাটি একেক সময়ে একেক অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। এসব অজুহাত যুক্তিসংগত না হওয়ার কারণে গতকালের সভায় তাদের শোকজ করা হয়। এক্সিলারেট এনার্জি  তাদের দুর্বলতা স্বীকার করেছে।’  
গত ২৪ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনালটি কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এরপর ১০ মে প্রথম দফায় এলএনজি সরবরাহের দিন ঠিক করা হয়। এরপর ২৫ অথবা ২৬ মে দ্বিতীয় দফায় আরও একবার এলএনজি সরবরাহের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও সরবরাহ শুরু করতে পারেনি এক্সিলারেট এনার্জি। এরপর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ ৬ থেকে ১২ জুনের মধ্যে যে কোনো একদিন এলএনজি সরবরাহের দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে পাইপলাইনের ত্রুটির কারণে সরবরাহ শুরু করা যায়নি বলে এক্সিলারেট এনার্জির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরপর ত্রুটি সারিয়ে ২৫ জুন ঠিক হয়। এর পরে ৪ জুলাই নির্ধারণ হয়। এই তারিখ অতিক্রম হওয়ার ১০ দিনের মাথায় তারা আরও এক মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি সক্ষমতা যাচাই না করে অনেকটা তাড়াহুড়া করে এলএনজি আমদানি করায় সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া যাদের ওপর এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার কতটা সক্ষম সেটা তলিয়ে দেখা হয়নি। সরকারের উচিত পুরো বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। তাদের মতে, দেশে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে এলএনজি আদতে কাজে আসবে নাকি বিদ্যুৎ ও শিল্প বাণিজ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে সেটিও খতিয়ে দেখা।
এক্সিলারেট এনার্জি সময়ক্ষেপণের সর্বশেষ কারণ হিসেবে বলছে, সাগর বেশ উত্তাল। এখনো বলা যাচ্ছে না ঠিক করে। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এখন সবকিছু সাগরের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।  
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জ্বালানি ব্যবহারের বড় একটি পরিবর্তন ঘটবে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে। সরকারের পরিকল্পনায় আপাতত সংকট মোকাবেলার পুরোটাই এলএনজি আমদানির কথা বলা হচ্ছে। একবারে এতটা গ্যাস একসঙ্গে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বাড়ানোর ঘটনা অতীতে আর ঘটেনি। বিষয়টি আশা জাগালেও গোল বেঁধেছে দর নিয়ে। স্পষ্টত, বিইআরসি কারিগরি কমিটি বলছে, ১৪২ থেকে ১৪৩ ভাগ দর বাড়াবে। একবারে এতটা জ্বালানির দরও বাড়ানো হয়নি কখনো। স্বাভাবিকভাবেই শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে পণ্যেরও দর বাড়বে। আর দুর্ভোগ বাড়বে সাধারণ মানুষের। তবে এ বিষয়ে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো গবেষণার কথা জানায়নি।
বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘ভয়াবহ এক সংকট তৈরি করা হচ্ছে এলএনজি আমদানি করে। প্রয়োজন ছিল সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তারপর আমদানি করা। অতিরিক্ত তাড়াহুড়া করার কারণে এমনটা হয়েছে।’

 
Electronic Paper