ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মূলধন সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

এগিয়ে বেসরকারি রাষ্ট্রায়ত্তে ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি টাকা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৮

মূলধন সংরক্ষণে পিছিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। অন্যদিকে এগিয়ে আছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

গ্রাহক স্বার্থের ঝুঁকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষে ন্যূনতম এ মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ৯টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৬ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৪৫২ কোটি ৭৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; জনতা ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা; রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ৬৩৭ কোটি ৬২ লাখ টকা এবং সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালীর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা ৬৩ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৮১৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অপর দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক ও বিডিবিএল মূলধন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি মূলধন রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মোট বাড়তি মূলধনের পরিমাণ ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। তবে একক ব্যাংক হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক ও আইসিবির ঘাটতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটির মোট ঘাটতির পরিমাণ রয়েছে ২ হাজার ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের ২৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ফারমার্স ব্যাংকের ২৬২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং আইসিবির ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণে এগিয়ে থাকার মূলে এসব ব্যাংকের লাভজনক পরিচালন ব্যবস্থা কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা করছে। যেহেতু তারা বেশি মুনাফা করছে সে কারণে মূলধন বাড়াতে পারছে। তারা ঋণ দিচ্ছে এবং ‘রিস্ক কভার এজেটও‘ সংরক্ষণ করতে পারছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দুটি পথ খোলা আছে। তা হলো- ভালো ঋণ বিতরণের পাশাপাশি তা লাভজনক রাখা। যে ব্যাংক যত মুনাফা করবে সে ব্যাংক তত মূলধন সংরক্ষণ করতে পারবে।
নানা অনিয়ম আর দুর্নী?তিতে জড়িয়ে পড়ায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে গিয়েও মূলধনেই টান পড়ছে। খেলাপি ঋণের ভারে দিন দিন তীব্র আর্থিক সংকটের মুখে পড়ছে ব্যাংকগুলো। আর এসব ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিবছর বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ করে সরকার।
রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকর খেলাপি ঋণ সংস্কৃতিনির্ভর ব্যবস্থাপনা কাঠামোই মূলধন ঘাটতির কারণ বলে মনে করেন পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতি রোধে সামনে দুটি পথ খোলা আছে। এক, একটি ব্যাংক রেখে বাকি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। আগের খেলাপি পুনর্গঠন করলেও তা ফল দেবে না। আবার খেলাপি হবে। দুই, বন্ধ করা সম্ভব না হলে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু আমানত সংগ্রহ করবে। আর সরকারকে ঋণ দিতে হবে। ব্যক্তি খাতে ঋণ দেওয়া অব্যাহত রাখলেই ব্যাংক থেকে কিছু লোক ঋণের নামে নিয়ে যাবে আর ওই টাকা ফিরে আসবে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোকে গত ১০ বছরে বাজেট থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। আগামী ১০ বছরে আরও ১৭-১৮ হাজার কোটি টাকা দেওয়া লাগবে। এসব ব্যাংক রাখলেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে। খেলাপির জন্য প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। আর এ কারণে টান পড়ে মূলধনে। আর ঘাটতি পূরণে বাজেট থেকে টাকা দিতে হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম। যে কারণে প্রভিশন রাখতে হয় কম। আর প্রভিশন কম রাখার কারণে মূলধন সংরক্ষণ করতে বেগ পেতে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বর্তমান ব্যাংকিং খাতের সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশের ওপরে বেসরকারি ব্যাংকের। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ হার ৯০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। আহসান এইচ মনসুরের মতে, এ অবস্থার উত্তরণ না হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে শুধু খেলাপি ঋণ নিয়েই বসে থাকতে হবে।

 
Electronic Paper