রপ্তানি আয়ের পরের চিত্র
মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতেও ধস
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
রপ্তানি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভাটা পড়েছে। বৈশ্বিক মৃদু অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে। এ কারণে নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আর নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে ধস নেমেছে। তবে ভোগ্য পণ্য আমদানি ঠিকই বেড়ে গেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি না হলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করবে না, বিনিয়োগ না করার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্ট মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা কমেছে ৯৯২ মিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম। অন্যদিকে ঋণপত্র নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই।
মূলধনী যন্ত্রপাতি ঋণপত্র খোলাকে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। দুই মাসে ঋণপত্র খোলা যে হারে কমেছে তাতে বিনিয়োগের নেতিবাচক খবর দিচ্ছে। একই সময়ে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি সূচিত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যে হারে প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছিল জুলাই-আগস্ট দুই মাস ও পরবর্তী এক মাসে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং আগের বছরের একই সময়ে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়েছিল নতুন বছরে তার চেয়ে ২ শতাংশ কমে গেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে যে হারে রপ্তানি আয় কমেছে, আগামীতেও অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কমেছে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি। জুলাই-আগস্ট দুই মাসে আমদানি হ্রাসের হার প্রায় ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দুই মাসে আমদানি হয়েছে ৭৫৫ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল এক হাজার ১৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। কাঁচামাল আমদানি কমেছে ১৯ দশমিক শতাংশ। জুলাই-আগস্ট দুই মাসে কাঁচামাল আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৭৩৮ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল তিন হাজার ৩৮১ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল। একইভাবে পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মূলধনী যন্ত্রপাতি কমেছে ৮ শতাংশ, শিল্পের অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। ভোগ্য পণ্য কমেছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এ বিষয়ে দেশের প্রধান রপ্তানিকারক শিল্প তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তা নেতা ও দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশে নতুন করে রপ্তানি হচ্ছে না। রপ্তানি কমে গেছে এ কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে হাল্কা মন্দা, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া ও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পেরে না ওঠা, রপ্তানি করে তা ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগার কারণে রপ্তানির ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এ কারণ নতুন করে বিনিয়োগ করার চিন্তা-ভাবনা করছে না তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
এর প্রভাব পড়ছে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে। আগামীতে এ অবস্থার উন্নতি হবে বলেও মনে হচ্ছে না। তবে বিশ্ববাজারে মন্দা কমে আসা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা, তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে মার্কেটিং আরও জোরদার করার গেলে অবস্থার উন্নতি হতেও পারে।