ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উভয় সংকটে বিবি

মুদ্রার বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন

জাফর আহমদ
🕐 ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৯

মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) উভয় সংকটে। রফতানিকারকরা চায় প্রতিযোগী দেশগুলো যেভাবে ডলারের বিপরীতে স্বদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে রফতানি বাড়িয়েছে সেভাবে বাংলাদেশও করুক। অন্যদিকে আমদানি বাণিজ্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার চাপ রয়েছে। ফলে টাকার বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পক্ষকেই পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারছে না।

 

দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক। যা মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ ভাগ। এর সঙ্গে যুক্ত আছে দেশের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহ ও অভ্যন্তরীণ বাজার প্রসারিত করার বিষয়টি। এছাড়া ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প এবং আর্থিক খাত অনেকাংশ নির্ভর তৈরি পোশাক শিল্পের উপর। 

এজন্য সরকার এ খাত বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ গুরুত্ব দেওয়াকে গুরুত্ব সহকারে কাজে লাগান এ খাতের উদ্যোক্তারা। ফলে রফতানি হ্রাস-বৃদ্ধিতে সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের তিন মাসে রফতানি কমে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা নেতারা।

এ বিষয়ে নীট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ)-এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বছরের শুরুতেই আমরা রফতানি আয় কমে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়েছে। রফতানি ধস রোধে সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আগামীতে আরও খারাপ খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, রফতানি ধস রোধে নগদ প্রণোদনার হার বৃদ্ধি, মূল্য সংযোজনী পণ্য রফতানির বিপরীতে টাকাকে অবমূল্যায়ন করা ও ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমাতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি আয় কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। আর এর সঙ্গে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবস্থা বিবেচনা করে করে পুরনো বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে এফওবি মূল্যের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ প্রণোদনা এক বছর কার্যকর থাকলে কোষাগার থেকে সরকারকে বছরে প্রায় ১ হাজার ২ কোটি টাকা দিতে হবে। এছাড়া গত ছয় মাসে প্রায় ৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। রফতানিকারকরা মনে করছে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মায়ানমার ডলারের বিপরীতে তাদের স্বদেশি মুদ্রার অবমূলায়ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিদেশি কার্যাদেশ টেনে নিচ্ছে। এই কার্যাদেশ ফিরে যাওয়া রোধ করতে হলে আরো বেশি হারে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করলে দেশের রফতানি বাণিজ্য সুবিধা করলেও অসুবিধা পড়বে দেশের আমদানি বাণিজ্য। বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির দেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তথ্যে দেখা যায়, ৩৬ দশমিক ২০৫ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৫৮ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮৫ ভাগ বা ৩১ বিলিয়ন ডলার তৈরি পোশাক। এই তৈরি পোশাক রফতানির আবার প্রায় ৪০ ভাগ আবার চলে যায় কাঁচামাল পণ্য সংগ্রহের জন্য। ফলে ডলারের বিপরীতে কিছু সুবিধা হলেও অসুবিধা হবে বেশি। ফলে রফতানিকারকরা কিছু সুবিধা করলেও অসুবিধা হবে বেশি। আর মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে ঊর্ধ্বমূল্যের পণ্য কেনার মধ্যে দিয়ে এই ক্ষতি গুনতে হবে নিম্ন আয়ের কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষরা।

অবশ্য সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সরকারের উন্নয়ন কমকা-ের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বেশি হওয়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়তে হয়। পেট্রোলিয়াম পণ্য ও নির্দিষ্ট এসব মূলধনি যন্ত্রপাতি সরকারি আমদানি করার কারণে এর নেতিবাচক ফল কিছু থাকলেও তা সরকারের উপর পড়বে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হলো প্রবাসী আয়। ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন হলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ে। যে প্রবাসী আয়ে দেশের পল্লী অঞ্চলের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আরও কিছুটা চাঙ্গা হবে। কারণ তারা তার যে দেশেই থাক সেই দেশ থেকে অর্থ পাঠাতে হলে তা ডলারে রূপান্তর করতে হয়। তারপর ওই ডলার দেশে এসে টাকায় রূপান্তর হয় টাকায়। ফলে টাকার অবমূল্যায়নে প্রবাসীরাও কিছুটা উপকৃত হবে।

টাকার অবমূল্যায়নের ফলে পণ্য মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাল, মাংস ও সবজি বাদে সব ধরনের খাদ্য পণ্য আমদানি নির্ভর। ভোজ্য তেল, ডাল, মসলা ও চিনির আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারকে মাঝে মাঝেই বিব্রত হতে হয়। ২০১৮ সালে বন্যায় হাওর ও উত্তরাঞ্চলে ধান ডুবে যাওয়ার ফলে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। মানুষের জীবন-যাত্রার খরচ বেড়ে যায়। সরকার রফতানিকারকদের চাপে টাকার অবমূল্যায়ন করলে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে কষ্ট বাড়বে। বিষয়টি এত নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করেন পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ভারত ও চীন থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এসব দেশ এরই মধ্যে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলেও খাদ্য পণ্য আমদানিতে কোনো ক্ষতি হবে না।

 
Electronic Paper