ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেমিট্যান্সের ৭০ ভাগ আসে ৬ দেশ থেকে

জাফর আহমদ
🕐 ১০:০১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ০৬, ২০১৯

দেশে পাঠানো প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) ৭০ ভাগ পাঠাচ্ছেন ছয় দেশে কর্মরত প্রবাসীরা। এর মধ্যে ৯০ ভাগ আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। আর বাকি প্রায় দুই শতাধিক দেশ থেকে আসছে মাত্র ৩০ ভাগ প্রবাসী আয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্য বা নির্দিষ্ট দেশগুলোতে সমস্যা হলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমে আসে। যে কারণে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠানো দেশগুলো হলো সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য। এর বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশের তালিকাতেও তেলনির্ভর ওমান, কাতার বাহরাইনের মতো দেশ রয়েছে।

প্রায় এক দশক সময় এসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় পাঠানোর মর্যাদা ধরে রেখেছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬ দশমিক ৪৩৯ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ পাঠিয়েছে ছয়টি দেশ। দেশগুলোর মধ্যে এ বছর রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব থেকে ৩ দশমিক ১১০ বিলিয়ন ডলার; আরব আমিরাত থেকে ২ দশমিক ৫৪১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১ দশমিক ৮৪৩ বিলিয়ন ডলার, কুয়েত থেকে ১ দশমিক ৪৬৩ বিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ১ দশমিক ১৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১ দশমিক ১৭৬ বিলিয়ন ডলার।

দেশের অর্থনীতি তিন প্রধান ভিত্তির মধ্যে অন্যতম হলো প্রবাসী আয়। এ প্রবাসী আয়ে টান পড়লে টান পড়ে আমদানি বাণিজ্য, বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ এবং একই সঙ্গে টালমাটাল অবস্থায় পড়ে দেশের মুদ্রার বিনিময় হার। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ৮৪ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মূলত রপ্তানির চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি ও প্রবাসী আয় প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ অচলাবস্থা দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ (বৈদেশিক মুদ্রা) থেকে জোগান দিতে হয়েছে। এতে রপ্তানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক ঋণ পেতে সক্ষমতার যে মাপকাঠি তা ব্যাহত হয়। গত ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। প্রবাসী আয় কমে আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত রিজার্ভ কমে আসে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভ সর্বনিম্ন ৩১ বিলিয়ন ডলারে নামে। সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৭৭৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রবাসী আয় হ্রাস পাওয়ায় কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রবাসী আয় মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর। বাংলাদেশ সারা বিশে^র দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় পায় তার অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ কয়েকটি দেশ থেকে। মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকার কারণে সেখান থেকে প্রবাসী আয় কমে আসে। এতে পুরো প্রবাসী আয়ে ধাক্কা লাগে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করা, হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা প্রেরণ বন্ধ করে বৈধ পথে আয় পাঠাতে প্রণোদনা দেওয়া এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের বাইরে নতুন দেশ খুঁজে বের করার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সরকারের অন্য সংস্থা থেকে বিদেশমুখি শ্রমিকদের দক্ষ করে পাঠানোসহ বিদেশ যেতে শ্রমিকদের ব্যাংক ঋণ ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ভিন্ন দেশ অনুসন্ধানের বিষয়টি আপাতত কাজে লাগলেও আগামীতে সুবিধা হওয়ার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, আমাদের প্রবাসী আয় তেলসৃমদ্ধ দেশনির্ভরতার কারণে তেলের দামের ওঠা-নামার সঙ্গে প্রবাসী আয় বাড়ে কমে। এ জন্য প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রের বৈচিত্র্য আনতে হবে, ভিন্ন দেশের দিকে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হচ্ছি। ইতোমধ্যে হংকং, জাপান ও কোরিয়াতে লোক পাঠানো শুরু করেছি। এ সব দেশে লোক পাঠানো গেলে একদিকে দক্ষ লোক পাঠানো যাবে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যনির্ভরতা কমবে।

প্রবাসী আয় মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর কমানো গেলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের, বিশেষ করে নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। মধ্যপ্রাচ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক নিচুমানের। হংকং, কোরিয়া ও জাপানের মতো দেশে আইনশৃঙ্খলা উন্নত ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানো যাবে। এ কারণে এসব দেশে কম জনবল পাঠিয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি শ্রমিকরাও নিরাপদে কাজ করতে পারবেন। তবে এ সব দেশে জনবল পাঠানোর গতি জোরদার করা জরুরি।

 
Electronic Paper