ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লিজিং কোম্পানির ফাঁদে বাণিজ্যিক ব্যাংক

টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯

ব্যাংক-বহির্ভূত দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও প্রায় ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। যে কোনো দিন বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। সংকটে থাকা এসব রুগ্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধাক্কা ৪ থেকে ৫টি ব্যাংকেও লেগেছে। এসব ব্যাংকের কাছে থেকে বেশি সুদে ধার নিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা এখন টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ সূত্র জানায়, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও আইসিবি পিপলসসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ধার দিয়েছিল। এর মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) ইতোমধ্যে বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়াসহ অর্থ মন্ত্রালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। ফলে এ সব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে আরও কমপক্ষে ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। অবস্থার উন্নতি না হলে পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানের অবসানের কথা ভাবতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

এরই মধ্যে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি বা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের অন্যতম উৎস বাণিজ্যিক ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি সুদ দেওয়া ও ‘বিশেষ সম্পর্কে’র কারণে ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকে থাকে। এই বিশেষ সুযোগ নিতে গিয়ে আটককে গেছে এসব ব্যাংক। ঋণ দিয়ে আবার তা ফেরত এলে বিষয়টি নিয়ে কথা উঠত না। কিন্তু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সংকটে পড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) মতো অন্যান্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ আরও কমপক্ষে সাতটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক সুবিধা করতে না পারার কারণে ধার দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন গয়ে পড়েছে।

লিজিং কোম্পানি নামে পরিচিত এ সব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ রয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে। এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে আমানতকারীর জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। নাজুক অবস্থায় থাকা এমন ১২ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রেড জোন বা লাল তালিকাভুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অবস্থায় দেওয়া ধার ফেরত অর্থ পেতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের লিজিং কোম্পানিকে ধার দেওয়া একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, অন্যান্য খাতে ঋণ দেওয়ার সুযোগ থাকলেও লোভে পড়ে লিজিং কোম্পানিকে ঋণ দিয়ে বিপদে পড়েছে। এখন না পাচ্ছে টাকা, না পাচ্ছে সুদ। আবার কবে টাকা ফেরত দেবে এ ব্যাপারেও কোনো প্রতিশ্রুতি মিলছে না। ফলে নতুন করে গ্রাহককে টাকা দেবে সেটাও দিতে পারছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, এসব বাণিজ্যিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ইনজেক্ট’ করেছিল। এখন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। যদি পিপলস লিজিংয়ে তাদের টাকা থাকে তাহলে কথা আলাদা, পিপলসের অবস্থা খারাপ। আর যদি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের টাকা থাকে তাহলে তারা নিজেরাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তো এখন সুদ দিয়ে দেবে আর মূল টাকা পরে দেওয়ার আলোচনায় যেতে পারে।

 
Electronic Paper