শ্রমিকের নতুন হুমকি প্রযুক্তি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
প্রযুক্তির ক্রমশ বিকাশের ফলে আগামী এক দশকের মধ্যে দেশের তৈরি পোশাক কারাখানা শ্রমিকদের জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে রোবট। উজ্জ্বল আলোর নিচে লাইন ধরে বসানো সারি সারি সেলাই মেশিন। কাজ করছেন শত শত নারী শ্রমিক। যে কোনো গার্মেন্ট কারখানার চিরচেনা এই দৃশ্য তখন অনেকটাই কমে যাবে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমনটাই আশঙ্কা করছেন নিউইয়র্কের শিমি টেকনোলজি নামের একটি প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারাহ ক্রেসলি। যিনি বাংলাদেশে এসে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার কাছে ভবিষ্যতে এই খাতে শ্রমশক্তির চিত্রটা কী হতে পারে, তা পরিষ্কার।
সারাহ ক্রেসলি বলেন, দশ বছর পরের পোশাক কারখানায় খুব অল্প শ্রমিকই আসলে কাজ করবে। রোবটিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি তখনো আমরা হয়তো কিছু কর্মীকে কাজ করতে দেখব। কারখানাজুড়ে তখন বেশি থাকবে নানা ধরনের স্বয়ংক্রিয় রোবটিক যন্ত্রপাতি। থাকবে অনেক কম্পিউটার। কারখানার বড় অংশজুড়ে থাকবে ডিজাইন রুম। বেশির ভাগ কর্মী কাজ করবে এই ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে। সারাহ ক্রেসলি এর আগে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে। যেভাবে অটোমেশন গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে পাল্টে দিয়েছেন, এবার পোশাক শিল্পে তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
সারাহ ক্রেসলি বলেন, আমরা নিজেদের একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের অবস্থানে রেখে কল্পনা করে এই কর্মসূচি তৈরি করেছি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকের খুব কমই আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আছে। আমরা আমাদের লার্নিং টুলগুলো তৈরি করেছি একটা গেমের মতো করে। আমরা একটা ভিডিও গেমের মতো ইন্টারফেস তৈরি করেছি, তার সঙ্গে যোগ করেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
যে শিল্পে বাংলাদেশে কাজ করে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ, গত কয়েক দশক ধরে যে খাতে তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি কাজ, তার অবস্থা তাহলে কী দাঁড়াবে? এমন প্রশ্নে উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে সারাহ ক্রেসলির কাছে। তিনি বলেন, এদের ৬০ হতে ৮৮ শতাংশ তাদের কাজ হারাবে অটোমেশনের কারণে। অর্থাৎ লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে। এটা আমার হিসেব নয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেব।
তার মতে, বাংলাদেশের সামনে বিপদ অনেক রকমের। প্রথমটা হচ্ছে এই অটোমেশন, যেটা ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে বদলে যাওয়া ফ্যাশন ট্রেন্ড, যেটা বিরাট প্রভাব ফেলছে পোশাকের ব্রান্ডগুলোর ওপর। আর সবশেষে আছে অটোমেশনের চূড়ান্ত ধাপে পোশাক শিল্পের ‘রিশোরিং’ বা ‘নিয়ারশোরিং’। অর্থাৎ যেখান থেকে এই পোশাক শিল্প বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এসেছে, এই শিল্পের সেখানেই ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি।
যে দেশের অর্থনীতির প্রধান ইঞ্জিন হয়ে উঠেছে এই পোশাক শিল্প, তার ভবিষ্যৎ তাহলে কী? ব্যাপারটা নিয়ে কি আসলেই নড়ে-চড়ে বসার সময় এসেছে? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল গার্মেন্টস খাতের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন ফজলুল হকের কাছে, যিনি বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি। পোশাক শিল্প খাতে অটোমেশনের যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে, সেটিকে তিনি বিপদ হিসেবে দেখতে রাজি নন। তবে অটোমেশন যে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে, সেটা স্বীকার করলেন তিনি।
ফজলুল হক বলেন, একটা মাঝারি আকারের কারখানার কাটিং সেকশনে দেড়শো-দুশো লোক লাগতো। সেখানে এখন অটোমেটিক কাটিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে শ্রমিক লাগে দশ থেকে বারো জন। অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ লোক লাগে। এরকম অটোমেশন কিন্তু চলছেই। আগামী দশ বছরে এই শিল্পে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে অটোমেশনের কারণে যত লোক কাজ হারাচ্ছেন, তাদের আবার এই শিল্পেই কোন না কোনভাবে কর্মসংস্থান হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে এখনো এই শিল্পের আকার বাড়ছে।