ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঈদে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

জাফর আহমদ
🕐 ৯:০২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য জেগেছে। উৎসবকেন্দ্রিক দেশের অন্য যে কোনো উৎস অর্থনীতির চেয়ে কোরবানির ঈদ উৎপাদন ও সামাজিক বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কোরবানির পশু সরবরাহকে কেন্দ্র করে পল্লী অঞ্চলে উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ দেয়। এ বছর শুধু কোরবানির কেন্দ্রিক প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। আর এ প্রায় ৮০ ভাগই চলে যাবে গ্রামে। পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার দেশে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ পশু ক্রয় বিক্রয় হবে।

এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা মূল্যের ছাগল থেকে শুরু করে প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যে গরু হয়েছে। গড়ে ৬০ হাজার টাকা করে ধরলে এসব পশুর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে কোরবানি কেন্দ্রিক গরুর খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবসা মিলে আরও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। আর বিপুল পরিমাণ এই কর্মযজ্ঞের প্রায় ৮০ শতাংশই চলে যায় গরুর উৎপাদনস্থল পল্লী অঞ্চলের খামারিদের কাছে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়।

এ কোরবানির ঈদের কেনা-কাটা নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি অন্য উৎসব নববর্ষ, ঈদুল ভেতর বা অন্য কোনো উৎসবে মুখরিত হয় না। ঈদকেন্দ্রিক কেনা-কাটা প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার। এর বাইরে কোরবানি নির্ভর বিপুল কর্মযজ্ঞের পুরোটাই গ্রামের।

কোরবানির ঈদ একই সঙ্গে সামাজিক বণ্টন ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। অন্য উৎসব বা শিল্প খাত এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্পর্শ করতে পারে না বলে মনে করেন পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, দেশে উৎপাদন, যোগাযোগ, সেবা সব কিছু শহর কেন্দ্রিক। এ কারণে সব ধরনের অবকাঠামোও শহরেই গড়ে ওঠে। একমাত্র ঈদুল আজহা কেন্দ্রিক যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা শুধু গ্রাম কেন্দ্রিক। কোরবানিকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সাম্যের ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছে। পশু কোরবানি করে এক তৃতীয়াংশ দরিদ্র মানুষকে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও দুই-তৃতীয়াংশও দেওয়া হয়। এর ফলে সারা বছর ধরে যেসব মানুষ গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগলের মাংস কিনতে পারে না, কোরবানির ঈদে তারা তা খেতে পারেন। এতে পুষ্টি নিরাপত্তা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে।

এক সময় ছিল দেশে কোরবানি দিতে পশুর বড় অংশের জন্য ভারত বা বাইরের অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশের পশুর ওপর নির্ভর করতে হতো। দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও খামার সৃষ্টিতে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসার কারণে দেশের পশু পালনে বিপ্লব ঘটে। দেশে এখন কোরবানির মোট চাহিদার পুরোটাই দেশের খামার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে থেকেও কিছু গরু, ছাগল ও উট জাতীয় কিছু পশু আমদানি হয়। দেশে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ১ কোটি ১০ লাখ। দেশের খামারসহ কৃষক পর্যায়ে গরুর উৎপাদন ১ কোটি ১৭ লাখ হাজার গরু।

সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ ৭৮ হাজার ছোট্ট-বড় খামার খামার থেকে এসব গরু উৎপাদন হচ্ছে। এ পশু পালন বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। যা বছরজুড়ে মানুষের নিজেদের জীবন-জীবিকার পাশাপাপাশি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যয় হয়। এ অর্থ মূলত গ্রামের অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে। এছাড়া কোরবানিকে কেন্দ্র করে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও।

কোরবানি দেওয়ার জন্য বাড়িতে টাকা পাঠানোর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। যা আগের মাসের চেয়ে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এই পরিমাণ মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় এর পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবাসীরা বেশির ভাগ গ্রাম থেকে যাওয়ার কারণে এসব অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতিতেই যোগ হচ্ছে।

ঈদ সামনে করে প্রায় ২ কোটি মানুষ গ্রাম যায়। এসব মানুষ রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভারসহ মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদীর শিল্প এলাকায় কর্মরত আছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরের কেনা-কাটা করে গ্রামে যায়। সেখানেও কেনা-কাটা করে। এর প্রভাব পড়ে গ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যে। কোরবানির খণ্ডকালীন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করে নতুন অনুসঙ্গ। এর প্রভাব পড়ে পুরো পল্লী জীবন-সংস্কৃতিতে।

 

 
Electronic Paper