ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুদহার নয়ছয়ে আনা কঠিন

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০১৯

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ অত্যধিক, পরিচালন ব্যয়ও অস্বাভাবিক। এ কারণে সুদহারও বেশি। সুদহার এক অঙ্কে নামাতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বার বার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা বহাল রেখে সুদহার কমানো কখনো সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতেতে যদি সুদ কমানো হয় তাহলে ব্যাংকিং খাত যেটুকু অবিশিষ্ট আছে তাও শেষ হয়ে যাবে।

দেশের ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কার্যরত আছে। অর্থমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী এক বছরের বেশি সময়ে মাত্র ১৬টি ব্যাংক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুদহার নয়ছয় বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। এর মধ্যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই দুই-তৃতীয়াংশ। বাকি ব্যাংকগুলোর সুদহার এখনো ৯ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বশেষ ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এক অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিরা আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা শিগগিরই সুদহার ঋণ বিতরণে ৯ শতাংশ এবং আমানত সংগ্রহে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। বৈঠকের একটি সূত্র জানায় ব্যাংক মালিকরা এ কথাও বলেছেন, স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার কারণে এক ধরনের ‘মিসম্যাচ’ সমস্যায় পড়েছেন। এজন্য তারা সুদ হারের ক্ষেত্রে নয়ছয় বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নয়ছয় বাস্তবায়ন করতে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

বিষয়টি ব্যাংকগুলোর জন্য আত্মহত্যার শামিল হবে বলে মনে করছে আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক বছর আগে ব্যাংকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সুদহার নয়-ছয় বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ সময়ে নয়-ছয় বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকগুলোর যেটুকু অবশেষ আছে, সেটুকু থাকত না। ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্যাংকগুলো যদি আগামীতে নয়-ছয় বাস্তবায়ন করে তাহলে ব্যাংকগুলো টিকবে না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশের উপরে। পুনঃতফসিলি করা হয়েছে আরও প্রায় ১০ শতাংশ। এর বাইরে আরও বিপুল পরিমাণ। মানুষের আমানত ব্যাংকে না গিয়ে চলে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। যেটুকু আমানত পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে কাড়কাড়ি চলছে। এ অবস্থায় ছয় শতাংশ হারে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো যদি ঋণ বিতরণে ছয় শতাংশ আর আমানত সংগ্রহে ছয় শতাংশ বাস্তবায়ন করে তাহলে ব্যাংকিং খাত যেটুকু আছে সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে।
ব্যাংকগুলো নয়-ছয় বাস্তবায়ন করলে ছোট ব্যাংকগুলো বিপদে পড়বে। একই সঙ্গে নতুন ব্যাংকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হবে। এর ফলে আরও কিছু ফারমার্স ব্যাংকের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে ছোট ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী। তার মতে সুদহার নয়-ছয় বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করা কোনো পরিপক্ব পরিকল্পনা নয়। এর ফলাফল শুভ হবে না। খোলা কাগজকে সাবেক এই ব্যাংকার বলেন, এ ব্যাপারে ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ে কোনো অর্থনীতিবিদ আছেন। পুরোপুরি চিত্র দেখতে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।

 
Electronic Paper