ক্ষুদেদের সঞ্চয় ছাড়াল ১৫৪৬ কোটি টাকা
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৯, ২০১৯
স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাংকে সঞ্চয়ের পরিমাণ এক হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা ছাড়াল। ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩১ জন স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এ টাকা জমা করেছে। এর মধ্যে শহরের ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৮ শিক্ষার্থীর সঞ্চয় ১ হাজার ১৪৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর গ্রামের ৭ লাখ ১৬ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থী জমা করেছে ৩৯৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শিশুদের আর্থিক স্বাক্ষরতা ও ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি আমানতের স্বপ্নের ফসল বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও স্কুল ব্যাংকিংয়ের প্রবর্তক ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে আর্থিক স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা ও ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি আমানত বৃদ্ধির জন্য এটা করা হয়েছিল। এ জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমানত ও স্কুলের ছেলে-মেয়ের অংশগ্রহণ মনে করে আমরা সফল হয়েছি।
১০০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জমা সঞ্চয় করছেন। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অভিভাবকের সহযোগিতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা ও লেনদেন করতে হচ্ছে। ১৮ বছর পর এসব শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ গ্রাহক হিসেবে একা লেনদেন করতে পারছেন। ২০১০ সালের ২ নভেম্বরে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টকেই ১৮ বছর বয়স পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাউন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস ও আগামী দিনের নাগরিকদের ব্যাংকমুখী করে তোলার উদ্দেশ্যে স্কুল ব্যাংকিং শুরু করে। এ উদ্দেশ্য অনেক সফল হচ্ছে বলেও মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
শিক্ষার্থীরা ব্যাংকমুখী হলেও জাতীয় সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর ও নারী-পুরুষের যে বৈষম্য রয়েছে শিশুদের স্কুল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, শহরের স্কুল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যে হারে ছেলে শিশুরা এগিয়ে এসেছে, গ্রামের শিশুরা তার অর্ধেক হারে এগিয়ে আসতে পারেনি। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২২ শতাংশ বসবাস করে শহরে। আর গ্রামে বসবাস করে ৭৮ শতাংশ মানুষ। এই বিপুল মানুষের যেমন আমানত ও ব্যাংকের মুখোমুখি হওয়ার হার কম, শিশুদের ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত।
তথ্য অনুযায়ী, শহরের শিশুরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৮ জন। যা গ্রামের দ্বিগুণ। গ্রামের শিশুরা ব্যাংকমুখী হয়েছে শহরের অর্ধেকের কিছুটা ওপরে বা ৭ লাখ ১৬ হাজার ৭৭৩ জন। অন্যদিকে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে একই চিত্র প্রতিফলিত। শহরের শিশুরা সঞ্চয় করেছে চার ভাগের তিন ভাগ। অর্থাৎ ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গ্রামের শিশুরা সঞ্চয় করেছে চার ভাগের ১ ভাগ বা ৩৯৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের এসব অ্যাকাউন্টে গ্রাম-শহর ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে বৈষম্য প্রতিফলিত হলেও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে শিশুদের এগিয়ে বিষয়টিকে আর্থিক খাতে নতুন যুগের সূচনা করেছে বলে মনে করেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। শহর-গ্রাম ও ছেলে শিশু-মেয়ে শিশুর মধ্যে বৈষম্য হলেও এটা একটি শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াসিন আলী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বৈষম্যের পরও গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ব্যাংকের দিকে এগিয়ে এসেছে। জাতীয় ক্ষেত্রে যে হারে সঞ্চয় বৈষম্য আছে, শিশুদের ক্ষেত্রে তা কমে আসছে। ক্রমান্বয়ে এ হার আরও কমে আসবে।
একইভাবে মেয়ে শিশুরা ক্রমান্বয়ে বেশি হারে এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। আগে স্কুলে যেখানে মেয়ে শিশুরা আসতো না। এখন প্রায় সমান সমান হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে আসছে। এক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।
স্কুল ব্যাংকিংকে বাণিজ্যিকগুলো খুব ইতিবাচক নিয়েছে। তারা আগামী দিনের গ্রাহক পাওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৫৫ বাণিজ্যিক ব্যাংক স্কুল ব্যাংক উইং খুলেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে হিসাব খোলা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৩টি। বিশেষায়িত ও দেশি-বিদেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে শিশুদের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৬১৮টি।