ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভ্যাট আইন কার্যকর করাই বড় চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, জুন ১২, ২০১৯

নতুন ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আইন সংসদে পাস হয় ২০১২ সালে। এরপর আইনটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু বাস্তবায়ন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে তা দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। দুই বছর স্থগিত থাকার পর আগামী অর্থবছর (২০১৯-২০) অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে বলে বর্তমান সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে।

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি বিশ্লেষণ তৈরি করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তা অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। সেখানে এটি বাস্তবায়নের আগে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার’ মূল্য নিয়ন্ত্রণে আলাদা করহার নির্ধারণে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আলাদা করহার নির্ধারণ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন আইনে অসাধু কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিতে ‘সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ’ শিরোনামে একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেটি প্রত্যাহার বা না রাখার সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। পাশাপাশি সতর্ক করে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ অটোমেশন কাজ শেষ না করে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এটি কার্যকরের আগেই ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অনলাইন করা দরকার।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা। কারণ, ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে হবে। তবে ভোক্তা বা জনগণকে চাপে ফেলা যাবে না। এদিকে আবার বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জন করতেই হবে। এই ত্রিমুখী চাপ সামাল দিয়ে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং দাতাদের চাপ তো আছেই। ফলে সবাইকে খুশি রেখে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।

আইএমএফের চাপে ২০১২ সালে এ ভ্যাট আইন করা হয়। ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে আইনটি এখনো কার্যকর করতে পারেনি সরকার। ব্যবসায়ীদের মূল আপত্তি সর্বক্ষেত্রে অভিন্ন ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ করা নিয়ে।

এনবিআর ও বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, এফবিসিসিআইসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে অভিন্ন বা একটি রেটের পরিবর্তে একাধিক (মাল্টিপল) রেট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ভ্যাটের হার হচ্ছে ৫টি। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশসহ মোট ভ্যাটের হার হচ্ছে পাঁচটি। অন্য তিনটি হচ্ছে ৫, সাড়ে ৭ এবং ১০ শতাংশ। তবে কোন খাতে কত হার হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো তেমন কিছু জানা যায়নি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন আইনে যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা কার্যকর হলে এবং সর্বক্ষেত্রে রেয়াতের সুযোগ না রাখলে করের বোঝা বাড়বে। এতে করে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশীয় শিল্প খাত। চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।

যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দাবি করছেন, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে জনগণের ওপর করের চাপ বাড়বে না।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে যেসব খাতে প্রভাব পড়তে পারে তা হচ্ছে নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম উপকরণ রড, ইট; সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ওষুধ, ভোজ্যতেল, আবাসন খাতের সিআইশিট, এম এস প্রোডাক্ট, লেখার কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন জাতের মসলাসহ এরকম প্রায় একশটি দেশীয় পণ্য আছে। জনস্বার্থে এসব পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে ট্যারিফ মূল্য ভিত্তিতে কম হারে ভ্যাট আদায় করা হয় বর্তমানে।

নতুন আইনে ট্যারিফ ভ্যালু বাতিলের কথা বলা হচ্ছে। এর পরিবর্তে বাজার মূল্যে প্রযোজ্য হারে ওই সব পণ্য থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে। কোনো ধরনের রেয়াত থাকছে না। এতে করে ওই সব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং জনজীবনে চাপ আসবে।

এ ছাড়া বর্তমানে সেবা খাতের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ সংস্থা, আসবাব, স্বর্ণালঙ্কার, তথ্যপ্রযুক্তিসহ ১৬টি খাত রয়েছে, যেখানে মূল্য সংযোজনের ওপর বা আংশিক মূল্যের ওপর ভ্যাট আহরণ করা হয়। নতুন আইনে এই নিয়ম বাতিল করে প্রকৃত লেনদেনের ওপর ভ্যাট আরোপের কথা বলা হচ্ছে। এ নিয়ম কার্যকর হলে ওই সব সেবা খাতের খরচ বাড়বে এবং জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 
Electronic Paper