খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড
এক বছরে বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৩ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০১৯
সুদহার কমানো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নজরদারির পরও বেড়েছে খেলাপি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। আর এক বছরের ব্যবধাণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ শেষে সবগুলো ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। আর রাইট অফ (অবলোপন) করা ঋণখেলাপি ঋণের সঙ্গে যোগ করলে যা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
সম্প্রতি ঋণখেলাপি নীতিমালা, রাইট অফের নীতিমালা পরিবর্তন হয়েছে এরপরও ব্যাপকহারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের চাপ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের অভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সুদহারও খেলাপি ঋণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
সম্প্রতি ব্যাংক খাতে সুদহার কমেছে বলে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা কমেনি। যতটুকু কমেছে তার সুফল নিয়ে গেছে ব্যাংকের উদ্যোক্তারাই। উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের মধ্যে যাদের ঋণ অন্য ব্যাংকে আছে তাদের সবার ঋণে সুদহার কমলেও সাধারণ গ্রাহকদের ঋণে তা কমেনি। এ কারণে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সময় যত যাচ্ছে খেলাপি ঋণের নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের। মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এ সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ এক লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই সময় তাদের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও। মার্চ শেষে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। আর দেশে পরিচালিত ৯টি বিদেশি মালিকানার ব্যাংকে চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট ৩৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা বিতরণ করে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।