নিয়মিত হচ্ছে খেলাপি ঋণ
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৯
দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সুবিধাতে খেলাপি ঋণ নিয়মিত (পুনঃতফসিলি) করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পুনঃতফসিল করার পর ১০ বছরে এ টাকা পরিশোধ করা যাবে। সুদহার ৯ শতাংশ হারে প্রযোজ্য হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এ সুবিধা পেতে প্রজ্ঞাপন জারি থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ স্থিতির বিপরীতে এ সুযোগ কার্যকর হবে। ব্যাংকিং খাতের মন্দমানের ৮০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এ বিশেষ সুবিধার আওতায় আসবে।
প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ট্রেডিং খাতের গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি উপ-খাত, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিং উপ-খাত এবং লৌহ ও ইস্পাত খাত-এ সুবিধার আওতায় আসবে। সুবিধার আওতায় আসবে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের অকৃষি খাতের আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত শিল্প ঋণ। এ ছাড়া ইচ্ছার বাইরে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে খেলাপি ঋণ হয়েছে তারাও এ ধরনের সুযোগ পাবে, তবে তা ব্যাংক কর্তৃক নিরীক্ষাকৃত হবে হবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যেসব গ্রাহকের ঋণ ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দমানের খেলাপি তারা এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সে হিসাবে ৮০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এ ধরনের সুবিধায় আসবে। বাদ পড়বে ৮ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা প্রাথমিকমানের খেলাপি এবং ডাউটফুল বা মধ্যমমানের ৪ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ সুবিধা ১০ বছর ধরে পরিশোধ করার সুযোগ পাবে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। যা সাধারণ ঋণের চেয়ে কম।
বিশেষ সুবিধার আওতায় যেসব শর্ত পালন করতে হবে তা হলো, প্রজ্ঞাপন জারি থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
খেলাপির আবেদনের দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্দমানের মোট খেলাপি ঋণ ১০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে এক বছর। ৯ কিস্তির মধ্যে ৬টি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ওই সুযোগ বাতিল বলে গণ্য হবে।
ঋণস্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট নগদে দিতে হবে। এর আগের আদায় করা কিস্তির অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সময় এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে। পুনঃতফসিল-পরবর্তী ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে গ্রাহক নতুন ঋণ নিতে পারবে। তবে নতুন নেওয়া ঋণ যথানিয়মে পরিশোধে ব্যর্থ হলে এই প্রজ্ঞাপনের আওতায় দেওয়া সব সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।
বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার পরপরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে কোনো মূল্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এ জন্য খেলাপি গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া ইঙ্গিত দেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়। বিশেষ করে যারা ভালো গ্রাহক, যারা নিয়মিত সুদে-আসলে পরিশোধ করে থাকেন- তাদের কী সুবিধা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে কথা ওঠে। অনেক ভালো গ্রাহক খেলাপি হওয়ার জন্য আবেদন করে। এরই মধ্যে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক।