ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইসলামী ব্যাংকে জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের জের

বাদ পড়লেন সামীম-হেলাল

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০১৯

ইসলামী ব্যাংকের দুই পরিচালক যথাক্রমে পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হেলাল আহমেদ চৌধুরী ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের মেয়াদ শেষে নবায়ন না হওয়ায় নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে ব্যাংকটি।

বলা হচ্ছে, বোর্ডসভায় জঙ্গি ইস্যু, জঙ্গি অর্থায়ন ও জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কারণে এই দুজনের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। তবে এ বিষয় নিয়ে কোনো পক্ষই কথা বলতে রাজি হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত ৮ মে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডসভায় এই দুই পরিচালকের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। তাদের পরিবর্তে অন্য দুজনের নাম প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। অভিযোগ ওঠে, জঙ্গি অর্থায়ন ও জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কারণে এই দুই পরিচালকের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কথা বলতেও রাজি হননি।

তবে ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, ‘নবায়ন না হওয়ার বিষয়টি সাধারণ প্রক্রিয়া। মেয়াদ শেষে পুরনোদের চলে যেতে হয়, নতুনরা আসেন। উনাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। জঙ্গি অর্থায়নবিরোধী কথা বলার কারণে উনাদের মেয়াদ নবায়ন হয়নি-সাবেক দুই পরিচালকের বিষয়ে এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। আর জঙ্গি প্রসঙ্গ নিয়ে বাইরে থেকে নানাজন নানা কথা বলেন কিন্তু ভিতরে এসে এ সবের কিছুই পাওয়া যায় না। উনারাও কিছু পাননি নিশ্চয়ই। নতুন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহে সেখান থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। এখনই এ বিষয়ে আর বলা যাচ্ছে না।’

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই জামায়াতসংশ্লিষ্টতার কারণে ব্যাংকটি সমালোচিত হয়। বলা হতো ইসলামী ব্যাংক থেকে জামায়াতে ইসলামী সুবিধা নেয়। কথা উঠে জঙ্গি অর্থায়নসংশ্লিষ্টতা নিয়েও। যাত্রাবাড়ীর একটি শাখাতে সন্দেহজনক লেনদেনের অস্তিত্ব পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সব কারণে সে সময় সরকার ব্যাংকটি কঠোর নজরদারিতে নিয়ে আসে।

এরপর দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা পর্ষদ চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গি অর্থায়ন ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এমন ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরীসহ কয়েকজন নিয়োগ পান। ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় সারির এমন অনেকেই থেকে যান যারা জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিচালনা পর্ষদের নতুন আসা অনেকের ন্যায় এই দুই পরিচালক এ সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখা শুরু করেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো ধারার শক্তিটি সহজভাবে নেয়নি।

ইসলামী ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বাহ্যিকভাবে ব্যাংকটির পরিচালনায় পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হলেও প্রধান কার্যালয়ে দ্বিতীয় সারির অধিকাংশ কর্মকর্তা ও শাখা পর্যায়ে অনেকেই আগের ধারাতে সক্রিয় থাকেন। ফলে জামায়াতসংশ্লিষ্টতা ও জঙ্গি অর্থায়নের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা আক্রমণের শিকার হন। গত বছরের শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির তৎকালীন সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এক সভায় সামীম মোহাম্মদ আফজাল ইসলামী ব্যাংকের জঙ্গি অর্থায়ন ও জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরেন।

ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে লেখা হয়, ‘ইসলামী ব্যাংকের ৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ঋণগ্রহীতার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রদান করবে এবং ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওসমূহ কার্যক্রম গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তদারকি করবে।’ বৈঠকে সামীম মোহাম্মদ আফজালের বক্তব্যের পর এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয় বলে সন্দেহ করছিলেন ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ ব্যক্তি। এতে ক্ষুব্ধ হয় ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে দুজনকে নবায়ন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ ওই ব্যক্তি জানান, সামীম মোহাম্মদ আফজালের বক্তব্যে ইসলামী ব্যাংক বিব্রত হয়। উনি যে সব কথা বলেন, এ তথ্য কোথায় থেকে পান তা তিনিই জানেন। সামীম মোহাম্মদ আফজালের এ বক্তব্য সম্পর্কে ইসলামী ব্যাংকের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘উনি প্রত্যেকবারই ওখানে গিয়ে লাফালাফি করেন। এগুলো আমার কাছে এখন অসহ্য হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে ৯৯ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও মওদুদী সমর্থক আছেন। এত বড় ব্যাংকে কে কোন মতে বিশ্বাস করেন এটা জানা অসম্ভব!’ তিনি ইসলামী ব্যাংকের অর্থনীতিতে অবদানের চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, অসত্য কথা বলার ফলে ইসলামী ব্যাংকের ক্ষতি হতে পারে।

এ বিষয়ে খোলা কাগজের পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়া হলে কথা বলতে চাননি সদ্য সাবেক হওয়া ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল।

 
Electronic Paper