ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষিঋণে খেলাপি কমেছে

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০১৯

কৃষিঋণে খেলাপি ঋণের হার কমেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের নয়মাসে (জুলাই-মার্চ) কৃষিখাতে সব চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। গত অর্থবছরে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট কৃষিঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ৫ হাজার ১৯৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

কৃষিঋণ কৃষকদের কাছে সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে যাওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ ফেরত পাওয়া গেছে বলে মনে করেন সর্বোচ্চ কৃষিঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, কৃষিঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর পর্যবেক্ষণ জরুরি। কৃষকরা যখন টাকা ফেরত দিতে পারে তখন তাদের কাছে টাকা চাইতে হবে। সেটা আমরা করছি। এ কারণে আমাদের খেলাপি ঋণ প্রায় পাঁচ শতাংশ কমে এসেছে। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণস্পন্দন বেড়েছে। এ কারণেও মানুষ খেলাপি টাকা ফেরত আসছে।

কৃষিঋণে খেলাপি ঋণ কমে আসার বিষয়টিকে একটি ভালো ইঙ্গিত বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গা হওয়ার কারণে কৃষকদের হাতে টাকা আসছে। তারা শস্যভিত্তিক কৃষিঋণের বাইরে গবাদিপশু পালন, অর্থকরী সফল উৎপাদনসহ নানা রকম অর্থকরী ফসলের দিকে মনোনিবেশ করেছে। এ কারণে তাদের হাতে নগদ টাকা আসছে। এতে তারা সঞ্চয়মুখী হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে।

এ বছর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ার কারণে কৃষির ক্ষতি হয়নি। আগের বছরে ফসল উঠার মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। আগাম বন্যার কারণে হাওর ও উত্তরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ ধান ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়। এতে ঋণ ফেরত দিতে বেগ পেতে হয় কৃষকদের। চলতি বছরের ধান উঠার মৌসুমে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ার কারণে কৃষকদের ক্ষতি গুনতে হয়নি। এর ফলে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ায় বাড়তে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ৯ মাসে কৃষিঋণ বিতরণের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ সময়ে বিতরণ হয়েছে ১৬ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে ৯ মাসে কৃষিঋণ বিতরণে যে লক্ষ্যামাত্রা রয়েছে তা সঠিকভাবে বিতরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এটাই মনে হতে পারে যে, কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়ও বেশি হয়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ কমেছে।

দেশের শিল্প ঋণে খেলাপি ঋণের হার যেখানে নাগাল ছাড়া অবস্থা ধারণ করেছে, সেখানে কৃষিঋণ কমে আসার খবরটি ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের হার প্রায় ১০ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতের এই খেলাপি ঋণ সার্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য সরকার যেখানে খেলাপি হওয়ার শর্ত শিথিল ও খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার ক্ষেত্রে সহজ আইন প্রণয়ন করছে। সেখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই খেলাপি কৃষিঋণ কমে আসার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।

 
Electronic Paper