রোজায় চিনির বাজার
শঙ্কা অস্থির হওয়ার
জাফর আহমদ
🕐 ১২:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
প্রতিবছর রোজায় কোনো না কোনো একটি পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। সরবরাহ কম বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত তিন বছরে তেল, ছোলা, পিয়াজ ও চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার যথেষ্ট আমদানি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে চিনির দাম অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে সারা বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রোজায় ব্যবহৃত হয় ৩ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশীয় চিনিকলগুলো থেকে চিনি সরবরাহ করা হয় এক লাখ টনের কিছুটা কম। বাকি চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার চিনি আমদানি কম হয়েছে। ঋণপত্র খোলাও কমেছে গত বছরের চেয়ে। যদিও সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গত বছর চিনি যে পরিমাণ আমদানি করা হয়েছিল তা ছিল চাহিদার চেয়ে বেশি। এ কারণে গতবারের অব্যবহৃত চিনির কিছু অংশ থেকে যায়। সে চিনি এবার বাজারে আসবে। এ কারণে চিনির সরবরাহ কম বলে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি সাদা চিনির দাম বর্তমানে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। দেশি লাল চিনির কেজি ৬৫ থেকে বাজার ভেদে ৬৮ টাকা। তবে এখন থেকেই বাজারে চিনির দাম বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মিরপুর-১০-এর খুচরা চিনি বিক্রেতা রাফিজুল হক। কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা রমজান আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন আগের দামেই বিক্রি করছি। পরে কি হবে জানি না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি চিনির আমদানি মূল্য ছিল ৪০ টাকা। একই সময়ে চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আগের বছর একই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টন। চিনির আমদানি মূল্য ছিল ৪০ টাকার নিচে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট চিনি আমদানি হয়েছিল ২২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে চিনির আমদানি যেমন কমেছে, অন্যদিকে চিনির আমদানি মূল্য কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি চিনির আমদানি, পরিশোধন ও বাজার ব্যবস্থা গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে। এ কারণে চিনি কম আমদানি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে চিনির দাম বাড়ানোর আশঙ্কা করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের রমজানে দেশে যথেষ্ট চিনি আমদানি করা হয় ও মজুদও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু একটি শোধনাগার সংস্কারের নামে উৎপাদন কমিয়ে চিনির সরবরাহ কমানো হয়েছিল। এতে চিনির দাম বেড়ে যায়। পরে সরকারের চাপে চিনির সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। তত দিন চিনির দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের টাকা ক্রেতাদের পকেট থেকে বের করে নিয়ে যায় অসাধু ব্যবসায়ী। এবারও বাজারে এখন থেকে সরকার নজরদারি না বাড়ালে চিনির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
কোনো অবস্থায়ই ব্যবসায়ীরা যাতে চিনির দাম না বাড়াতে পারে সে জন্য সরকারের পর্যবেক্ষণ জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, এ অবস্থায় রিফাইনারি মিলগুলোতে কী পরিমাণ চিনি মজুদ আছে-নিশ্চয়ই সরকারের কাছে তথ্য আছে। সরকার রোজার আগে তদারকিও করছে নিশ্চয়ই।