স্বর্ণ আমদানির আবেদনপত্র বিতরণ শুরু
আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০১৯
এত দিন স্বর্ণ আমদানির কোনো নীতি বা আইন ছিল না। দেশে যে স্বর্ণ ব্যবহৃত হয় তা মূলত, চোরাইপথে আসা স্বর্ণ। ফলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন স্বর্ণনীতি হয়েছে, লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বর্ণ নীতিমালা কঠিন হয়েছে, বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি অনুপ্রাণিত করতে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা হুট করে কঠোর না করে ক্রমান্বয়ে করা উচিত।
বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এটি মূলত, স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-এর একটি অংশ হিসেবে এসেছে। গত বছর অক্টোবরে মন্ত্রিসভায় নীতিমালাটি অনুমোদিত হয়। আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে চলতি বছর ১৮ মার্চ থেকে। কিন্তু কতজন এখন পর্যন্ত এই আবেদনপত্র নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ এই আবেদনপত্র সংগ্রহ করেনি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, লাইসেন্স প্রথা চালু হলে মানুষ হয়রানির শিকার হবেন না।
তিনি বলেন, বরং এই লাইসেন্স দেওয়ার ফলে ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ হয়রানিমুক্ত হবে এবং সরকার লাভবান হবে। কারণ সরকার এখান থেকে শুল্ক পাবে।
এ নিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হেয়ছে, বাংলাদেশে স্বর্ণ নীতিমালা তৈরি হয় ২০১৮ সালে। এ নীতিমালার আলোকে লাইসেন্স নিতে হলে এক কোটি টাকার মূলধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লাইসেন্স থাকতে হবে এবং ব্যাংকে অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকা পে-অর্ডার হিসেবে জমা দিতে হবে। এই আবেদনপত্র যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিতে পারেন।
এদিকে সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও দুটি ইস্যুকে তুলে ধরেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রথমেই সরকারকে সহনশীল মাত্রায় শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা। এই সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেশি হলে মানুষ ভারতে গিয়ে স্বর্ণ কেনে। সে জন্যই আমরা বলছি, একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে।
গত বছর যখন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় তখন সব পক্ষকেই ডাকা হয়েছিল। সরকার ছাড়াও সেই আলোচনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরাও ছিলেন। বৈঠকে তাদের প্রত্যেকের মতামত নেওয়া হয়। সেখানে তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তা না হলে প্রস্তাবিত নীতির বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাইসেন্স দেওয়া হলে তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার নেওয়ার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন।
এদিকে, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে স্বর্ণ ব্যবসায়ের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, স্বর্ণ খাতে আমদানি ও দেশীয় বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নেই। সেই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও জানিয়েছিল সংস্থাটি।
শুল্ক কম ধার্য করার ব্যাপারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবির প্রশ্নে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা কমিয়ে আনা উচিত ধাপে ধাপে। যে শুল্কের কথা বলা হচ্ছে সেটা চট করে বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হবে না। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছি পর্যায়ক্রমে বাজারটাকে যদি এমন একটা জায়গায় উন্মুক্ত করা যায় তাহলে ক্রমান্বয়ে শুল্ক অনেক কমিয়ে দেওয়া বা একেবারে উঠিয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে তেমন উদাহরণ আছে তিনি উল্লেখ করেন।