ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

১০ টাকায় কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্ট

জমা ৩০০ কোটি টাকা

শিক্ষার্থীদের ১,৫১০ কোটি

জাফর আহমদ
🕐 ১১:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০১৯

সার, বীজ ও নগদ সহায়তা দেওয়ার জন্য কৃষককে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। পরবর্তীতে একই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সঞ্চয় ও ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ধরনের ব্যাংক হিসাবে সংখ্যা কোটি ছুঁয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে কৃষকের সঞ্চয়ের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে এক হাজার ৫১০ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৪১৩ স্কুল শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার। একই সঙ্গে এই প্রণোদনা দুর্নীতিমুক্তভাবে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি কৃষককে ব্যাংকিং সেবার অধীনে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। মূলত সরকারি কাজের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ সেবামূলক কাজটি করে থাকে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ টাকার এ ধরনের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৭টি। এসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৃষকরা সরকারি ভর্তুকির পাশাপাশি সঞ্চয় ও প্রবাসী পরিজনের রেমিট্যান্সও গ্রহণ করে থাকে। এসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকি গ্রহণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৩টি ব্যাংক হিসাব। ৪৩ হাজার ৯১১টি ব্যাংক হিসাবকে ব্যবহার করা হয়েছে কৃষককে ঋণ দেওয়ার জন্য। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকার কৃষকদের মাঝে ১২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সরকার ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার পর ওই সব হিসাবকে সচল রাখার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার একটি রিফাইনান্স তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫ শতাংশ হারে ঋণ গ্রহণ করে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবধারী কৃষকদের মাঝে ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করে। এর বাইরে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৩টি হিসাবকে সরকারি অন্যান্য ভর্তুকির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

কৃষকের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীরাও ব্যাংকে জমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৮ বছরের নিচে শিশুরা বাবা-মার তত্ত্বাবধানে টিফিন, আত্মীয়-স্বজনের উপহারের টাকা এ সব অ্যাকাউন্টে জমা করছে। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়মুখী করার জন্য পাকিস্তানি মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং শুরু করেছিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এসব স্কুল ব্যাংকিং বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রায় ৪ যুগ পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গর্ভনর ড. আতিউর রহমান স্কুল ব্যাংকিং চালু করে। আগামী দিনের নাগরিকদের প্রযুক্তি মুখোমুখি করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য স্কুল ব্যাংকিং চালু করা হয়। কিন্তু ৩ বছরের মাথায় স্কুল ব্যাংকিং রীতিমত মূলধনের অন্যতম জোগানদাতায় পরিণত হয়। যা দেশের বিনিয়োগে তহবিল গঠনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীর ব্যাংকে সঞ্চয়ের পরিমাণ এক হাজার ৫১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

কৃষকদের ব্যাংক হিসাব ১০ টাকা দিয়ে খোলার বিধান করার কারণে মুনাফার পরিবর্তে এটা সেবামূলক কাজে পরিণত হয়েছে। এ কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহ দেখায় না। অন্যদিকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব খোলার জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশি সংখ্যায় এগিয়ে এসেছে। স্কুলের এ সব শিক্ষার্থীকে আগামী দিনের গ্রাহক বলেও বিবেচনা করে থাকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তাই এসব ব্যাংক হিসাবের প্রায় ৬৮ ভাগ খোলা হয়েছে বেসরকারি ব্যাংক। বাকি মাত্র ৩২ ভাগ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শহরের ছেলে শিক্ষার্থীরা বেশি সংখ্যায় এগিয়ে এসেছে। মোট ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৪১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শহরের সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫৬ জন ছাত্র ৬৫৩ কোটি ৪৮ লাখ সঞ্চয় করেছে। অন্যদিকে পল্লী অঞ্চলে সর্বনিম্ন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৩৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী জমা করেছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৩৪ জন। শহরে অর্থবিত্তবান মানুষের বেশি বসবাস ও ব্যাংকের শাখার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে শহরের শিশুরা বেশি পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পেরেছে। পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিতেও বেশি অভ্যস্ত হয়েছে।

 
Electronic Paper