ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক মিনিটেই খুলবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

দরকার হবে ন্যাশনাল আইডি ও আঙ্গুলের ছাপ

জাফর আহমদ
🕐 ১১:৩০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৯

ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে ছবি, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, বাড়ির টেলিফোন বিল-পানির বিল-গ্যাস বিল-বিদ্যুৎ বিলের কপি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারী কোনো একনলেজমেন্ট স্বাক্ষর সংগ্রহ-এসব নানা ঝক্কি-ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। এসব ঝামেলায় অনেকে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে বিমুখ হন। এ সমস্যার চটপট সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক মিনিটের মধ্যে খোলা যাবে অ্যাকাউন্ট। দরকার হবে শুধু ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও হাতের আঙ্গুলের ছাপ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সবুজ সংকেত পেলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ কার্যক্রম শুরু করবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোনো অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ‘নো ইয়োর কাস্টমার-কেওয়াইসি’ অনুসরণ করে গ্রাহকের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ন্যাশনাল আইডি কার্ড, ছবি, ইটিএন থেকে শুরু করে সব ব্যক্তিগত তথ্যই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হয়। এতে একদিকে টাকা পয়সার খরচ বাড়ে, অন্যদিকে সময় অপচয় হয়।

এসব সমস্যার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে ‘ইকেওয়াইসি ইমপ্লিমেন্টেশন’-এর মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এনআইডি দিলেই সেটা ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনে রাখা তার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাংকের সার্ভারে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড ছাড়া অতিরিক্ত কোনো কাগজপত্র লাগবে না। ঝামেলা ছাড়াই এক মিনিট থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রাহক তার অ্যাকাউন্ট নম্বর পেয়ে যাবেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন শাখা, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি শাখা এবং ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সবুজ সংকেত দিলেই বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলক ‘ইকেওয়াইসি’ নির্ভর অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম শুরু করবে। এর পাশাপাশি চলতে থাকবে পুরাতন পদ্ধতি।

এ কার্যক্রম চালু করতে পারলে খুবই ভালো বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, দেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা হলে স্বচ্ছ হবে, প্রযুক্তিনির্ভর হবে। এটা হলে ‘জাহালাম’-র ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। তবে কারিগরি সাপোর্ট কতটা পাওয়া যাবে-সেটা দেখার বিষয় আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের কার্যক্রম চালু আছে। থাইল্যান্ডে ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলা যায়। ব্যাংক হিসাব খুলতে ইচ্ছুক মানুষ ব্যাংকে ফোনে করলেই ভিডিও কল থেকে ছবি সংগ্রহ করে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার থেকে তথ্য নিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে এখনই ভিডিও কলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা থাকবে না। আপাতত এনআইডি কার্ড ও টিপ সইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। পরবর্তীতে সব ব্যাংকের সারা দেশের শাখাতে এ ধরনের কার্যক্রম চালু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা ও গ্রাহকের দ্বারা দেশের কোনো ক্ষতিসাধিত না হয়, সে চিন্তা থেকেই এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু এসব তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে জটিলতায় নতুন গ্রাহকরা ব্যাংক বিমুখ হয়। বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকে প্রয়োজন থাকলেও ঝামেলার কারণে ব্যাংকমুখী হন না। এতে এসব মানুষ ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, ব্যাংক এসব মানুষের সঞ্চয় পায় না। এর ফলে দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ মানুষের হাতে অলস পড়ে থাকে, বিনিয়োগে ব্যবহার করা যায় না।

 
Electronic Paper