ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রবৃদ্ধিতে অবদান কমছে প্রবাসীদের

বৈদেশিক আয়প্রধান উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে : আহসান এইচ মনসুর

জাফর আহমদ
🕐 ১১:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তিন প্রধান খাতের অন্যতম প্রবাসী আয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও এ প্রবৃদ্ধিতে প্রবাসী আয়ের অবদান কমে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির সমীক্ষাতে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশিষ্ট গবেষক আহসান এইচ মনসুরের মতে, অর্থনীতিকে বৈদেশিক আয়প্রধান করে দেশকে উন্নত করার যে অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, রেমিটেন্সের অবদান কমে আসার ফলে আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর দেশের অর্থনীতির পরিধি বেড়েছে। বেড়েছে দেশজ মোট উৎপাদন-জিডিপি এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি। কিন্তু জিডিপিতে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো আয়ের অবদান ক্রমে কমে গেছে। ২০০৯-১০ সালে জিডিপির বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে হয় ৯ লাখ ১৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা; ২০১১-১২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপির বাজারমূল্য ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির মোট বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।

২০০৮-৯ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত বিদেশে পাঠানোর শ্রমিক সংখ্যা প্রায় একই ধারাতে থাকে। এ সময় প্রবাসীরা তাদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও একই ধারায় অব্যাহত রাখে। মাঝে দুই বছর দেশে রেমিটেন্স আসা কিছুটা কমলেও জিডিপিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির বাজারমূল্যে প্রবাসী শ্রমিকের অবদান ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ক্রমান্বয়ে কমা শুরু হয়। এ বছর প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠায় ১ লাখ ১০ হাজার ৫৮২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট জিডিপি মূল্যের ৮.২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা অর্থ পাঠান ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা; যা জিডিপির বাজারমূল্যের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান আরও কমে। এ বছর প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠান ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; যা মোট জিডিপির বাজারমূল্যের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠান ১ লাখ ১ হাজার ৯৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা; জিডিপিতে অবদান আরও কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকে।

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে গতি দেয়। প্রবাসী শ্রমিকরাই দেশের একমাত্র খাত যেখানে সরকারকে বড় ধরনের বিনিয়োগ করা লাগে না; যেমন করা লাগে দেশের অন্য দুই প্রধান খাত কৃষি ও তৈরি পোশাক শিল্পে। তাই প্রবাসী আয় কমার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে থাক্কা লাগে। এ ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশ সঠিক করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে রেমিটেন্স কমেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আগামীতে এ সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।

আহসান এইচ মনসুরের মতে, বাংলাদেশের জন্য প্রবাসী আয়ের উৎস সীমিত। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া দেশের দুটি বড় বাজার। সেখানে তাদের বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বৈদেশিক আয়ের হিসাবে টান পড়ছে। এ সব দেশ থেকে রেমিটেন্স আসা কমতে থাকবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের সামনে মাত্র দুটি পথ খোলা। প্রথমত, অদক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি দক্ষ ও ভিন্ন ভিন্ন ট্রেডে শ্রমিক পাঠাতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট দুটি অঞ্চলে বাংলাদেশের শ্রমিক পাঠানো হয়ে থাকে। এ দুটি দেশের বাইরে আরও নতুন নতুন দেশে শ্রমিক পাঠাতে বাজার খুঁজতে হবে।

 
Electronic Paper