কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আশার আলো
জাফর আহমদ
🕐 ১১:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৯
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভালো খবর দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। আট মাসে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫৮ দশমিক ২৩ ভাগ। এর মধ্যে ফুল ও পান পাতার রপ্তানি বেড়েছে প্রায় শতভাগ। দেশের রপ্তানি উন্নয়নে নিয়োজিত এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জুলাই-ফেব্রুয়ারি ৮ মাসের পরিসংখ্যানে এমন চিত্র তুলে ধরেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাসের তথ্যে দেখা যায়, কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৪৩ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাস সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪০৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে- চা, ফুল, পান, তামাক, ফল, জুস, শুকনো খাদ্য, গোল আলুসহ বিভিন্ন রকম কৃষিজাত পণ্য। রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব দেশে বাংলাদেশিরা অবস্থান করছেন, সেসব দেশেই বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। প্রবাসী বিদেশে যাওয়ার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ে। পাশাপাশি সরকার ও উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক ভূমিকার কারণেও রপ্তানি বাড়ে।
এ ব্যাপারে বোম্বে সুইট প্রোডাক্ট লিমিটেডের মার্কেটিং প্রধান ডিডি ঘোষাল খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের ব্যবহারকারী এ দেশের মানুষই। কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও লন্ডনই বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের প্রধান বাজার। এ ছাড়া সম্প্রতি সরকার কৃষিপণ্যে প্রণোদনার বৃদ্ধি, উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করা ও পণ্যের মান বৃদ্ধির কারণে বিদেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বাংলাদেশের আলু রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয় এটাই প্রমাণ করে।
ইপিবের তথ্যে দেখা যায়, আট মাস সময়ে অন্যতম কৃষিপণ্য চা রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে একই সমান চা রপ্তানি হয়েছিল। চা রপ্তানিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আট মাসে সবজি রপ্তানি হয়েছে ৭২ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলারের; আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪৯ মিলিয়ন ডলারের। বৃদ্ধির হার ৪৭ শতাংশ। তামাক রপ্তানি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের; আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪৮ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলারের। বৃদ্ধির হার ১১ শতাংশ। ফল রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে ফল রপ্তানি হয়েছিল ২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারের; এ বছর সেখানে ফল রপ্তানি হয়েছিল দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলারের। শুকনো খাদ্য রপ্তানি ২৭ ভাগ বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১১১ মিলিয়ন ডলারের। জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাসে ফুল ও পানের রপ্তানি বেড়েছে চার মিলিয়ন ডলারের। আগের বছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। বৃদ্ধির হার শতভাগ।
ফুল উৎপাদনে কৃষকদের এগিয়ে আসা; দেশে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি ও ফুলের মান ভালো হওয়া। এ কারণে ফুলের রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার গ্রোয়ার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসান উল্লাহ। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, ফুল চাষের ক্ষেত্রে একটির সঙ্গে আর একটি সম্পর্ক যুক্ত। ফুল উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো জানায়, যশোরে ভালো মানের ফুল উৎপাদন হওয়ার কারণে অনেক কৃষক এগিয়ে এসেছে ফুল চাষের জন্য। একই সময়ে দেশে ফুলের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এ কারণে ফুলের মানটাও ভালো হচ্ছে। এতে রপ্তানি বাড়ছে।
কৃষিতে দেশ বড় ধরনের অগ্রগতি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান খাদ্য ধান উৎপাদনেও। পাশাপাশি কৃষকরা ফুল, ফল, সবজির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ জন্য প্রধান খাদ্য ভাতের পাশাপাশি মাছ, সবজি, ফলমূল গ্রহণ করছে। এতে ভাতের ওপর চাপ কমছে। দেশের কৃষকরা এখন ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। বেশি খাদ্য উৎপাদনের ফলে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। কৃষককে দাম পাইয়ে দিতে বিকল্প বাজার হিসেবে চাল বাদে অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির দিকেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ও প্রক্রিয়াকরণকৃত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সরকার ১৫ ভাগ প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে একদিকে কৃষকরা দাম পাচ্ছেন, অন্যদিকে দেশ পাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।