‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে পাকিস্তানের ভূত
তদন্তে প্রমাণিত বিকৃতি আদেশ আজ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বই রচনায় ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ মিলেছে। বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি না থাকলেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে একাধিক ছবি যুক্ত করা হয়েছে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। এ নিয়ে চার পর্বে দৈনিক খোলা কাগজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল।
শুনানি শেষে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই তদন্তে বইটি রচনায় ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ মিলেছে। গতকাল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চে তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত আদেশের জন্য আজ দিন নির্ধারিত করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি উঠে এসেছে। ঘটনাটি দেশের সবার জন্য অ্যালার্মিং। শুনানিকালে আদালত বলেছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি আমরাও দেখেছি। এ বিষয়ে আগামীকাল আদেশ ঘোষণা করা হবে।’
‘বাংলাদেশের ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার তারিখ, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর অবদান এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতে নানান উন্নতি ঘটলেও সেগুলো গুরুত্বসহকারে আসেনি। এ ব্যাপারে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পর পর চারদিন দৈনিক খোলা কাগজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি ও তথ্য ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘যেখানে যার অবদান সেখানে তার ছবি সংযোজিত হয়েছে। এর বাইরে কিছু করার ছিল না।’
দৈনিক খোলা কাগজে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট হয়। গত ২ অক্টোবর রিটের শুনানি হয়। ওই দিন হাইকোর্ট ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তদন্ত করে অর্থ সচিবকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বইটিতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনয়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতার ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতি করা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, নির্বাহী ব্যবস্থাপক এবং প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের আবুল কালাম আজাদকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর ওই নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট সামষ্টিক অর্থনীতি) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বইটি প্রণয়নের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, তথ্য-উপাত্ত ও সংযোজিত ছবি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্পাদনা কমিটির কাজে অসঙ্গতি ছিল। কমিটির কাজে ধারাবাহিকতা ছিল না। নিয়মিত সভাও হতো না। তা ছাড়া গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির আদেশমূলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। জাতির জনকের ঘোষিত স্বাধীনতায় সাড়া দিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, “বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংক’-এর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। বিধায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অথবা বঙ্গবন্ধুর অন্য যেকোনো ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেত।’ কাজেই বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি না দেওয়ার পেছনে যে যুক্তি উত্থাপন করা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।