ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘রেড’ জোনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ খাতের ১২ প্রতিষ্ঠান এখন সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে অর্থাৎ ‘রেড জোনে’অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপ সহনশীল (স্ট্রেস টেস্টিং) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফেলেছে এ জোনে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তালিকায় ‘রেড জোনে’ থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফাস্ট লিজ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, রিলায়েন্স ফিন্যান্স, ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল এবং বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা জানার জন্য কয়েকটি সূচকের ওপর বিশেষ পদ্ধতিতে নিরীক্ষা চালায়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি, ঋণঝুঁকি, সম্পত্তির (ইকুইটি) মূল্যজনিত ঝুঁকি ও তারল্য অভিঘাত- এ চার ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া হয়। নিরীক্ষার ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ভালোগুলোকে ‘গ্রিন’ জোন, ভালোর চেয়ে একটু খারাপ অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ইয়েলো’ জোনে এবং চরম খারাপ অবস্থায় থাকাগুলোকে ‘রেড’ জোনে ভাগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৮ সালের সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকির বিচারে ‘গ্রিন’ জোনে রয়েছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। ‘ইয়েলো’ জোনে রয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠান। ‘রেড’ জোনে অর্থাৎ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বিশ্বস্তসূত্রে প্রকাশ, ঋণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা, সম্পত্তির ঝুঁকি ও তারল্য সংকটে দুরাবস্থায় রয়েছে ‘রেড’ জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ বিতরণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না এসব প্রতিষ্ঠান। অনেকে আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ করেছে বেশি। ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে আমানতের টাকা সময়মতো গ্রাহককে ফেরতও দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে। তবে আমানতের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না- এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এছাড়া ডেপুটি গভর্নর জানান, ‘রেড’ জোনে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিবিড়ভাবে তদারকি করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত খেলাপি ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ছিল চার হাজার ৫২০ কোটি টাকা। তিন মাসে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৮ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে হয় পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে আরও বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯২০ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বর শেষে তা ওঠে সাত হাজার ৪৯০ কোটি টাকায়, যা এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। তিন মাস আগে জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গত বছর তিন প্রান্তিকে অর্থাৎ নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বা প্রায় ৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল চার হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। তারা একদিকে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে, অন্যদিকে ঋণ বিতরণে কোনো যাচাই-বাছাই করছে না। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ঋণ আর ফেরত আসছে না। এতে নগদ অর্থ সংকটে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।আমানতকারী টাকার নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখে। তারা যদি গ্রাহকের সেই অর্থ সঠিক সময়ে ফেরত না দেয় তাহলে তারা কোথায় যাবে? এটি খুবই ভয়ঙ্কর অবস্থা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ আমানতকারীর সুরক্ষা দেয়া তাদের দায়িত্ব।’

 
Electronic Paper