ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যাচাই ছাড়া স্বর্ণ আমদানি নয়

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মান যাচাই না করে স্বর্ণ আমদানির বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে স্বর্ণ আমদানির সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে স্বর্ণের নামে অন্য ধাতু আমদানি করে দেশ থেকে টাকা পাচার হবে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে এমন মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্র্থিক বিভাগ, স্বর্ণ দোকান মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে গঠিত স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে এমন মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে মান যাচাইয়ের বিষয়টি খুবই যথার্থ বলে মনে করেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, যে কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেই পণ্যের মান যাচাই করা খুবই জরুরি। স্বর্ণ আমদানির ঘোষণা দিয়ে দেশে কী আসছে সেটা দেখার প্রয়োজন। স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করার জন্য আমদানি করা পুরো স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করার নামে সময়ক্ষেপণ না হয়- সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি ও স্বর্ণ আমদানিতে প্রণীত স্বর্ণনীতি বাস্তবায়নে কমিটির বৈঠকে নীতিমালার দ্রুত বাস্তবায়ন ও নীতি অনুসরণ করার তাগিদ দেওয়া হয়। নীতিমালার বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণে দেশ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমদানিকারকদের লাইসেন্স গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। স্বর্ণ নীতিমালার ৩.৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা ‘অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণবার আমদানির সময় বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে স্বর্ণবার আমদানি করার নিমিত্ত অনুমোদিত ডিলারকে আবশ্যিকভাবে আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস অ্যাক্ট এর বিধানাবলী অনুসরণ পূর্বক বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করবে।’ বক্তব্য অনুসরণে মত বক্তারা।

জুয়েলারি মালিক সমিতির নেতাদের মতে, প্রতি বছর দেশে স্বর্ণের চাহিদা প্রায় ২১ মেট্রিক টন। আর এই বিপুল পরিমান স্বর্ণ দেশে আসে চোরাই পথে। এই স্বর্ণের ওপর নির্ভর করে দেশজুড়ে কমপক্ষে ১০ হাজার স্বর্ণের দোকান চলছে। এর মধ্যে জুলেয়ারি মালিক সমিতির সদস্যই রয়েছে পাঁচ শতাধিক। জুয়েলারি মালিক সমিতির মতে, স্বর্ণ আমদানি আইন কঠিন হওয়ার কারণে স্বর্ণ আমদানি করে না। এ কারণে স্বর্ণ আমদানির পরিবর্তে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের সঙ্গে আনা স্বর্ণ ও অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে বিক্রি করে থাকে। টিআইবির তথ্য অনুযায়ী দেশে বৈধ পথে স্বর্ণ না আসার কারণে দেশে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারায়। স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে প্রশাসন ও জবাব দিহিতা নিশ্চিত করা তাগিদ দেন ইফতেখারুজ্জামান।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বর্ণ আমদানির নামে দেশ থেকে যাতে কোনো টাকা পাচার না হয় সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। বিভিন্ন সময় দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হলেও এর কোনো হদিস পাওয়া যায় নাই। স্বর্ণের মান যাচাই না করে আমদানির অনুমতি দিলে স্বর্ণের নামে অন্য ধাতু দেশে এনে টাকা পাচার করবে। এর মাধ্যমে টাকা পাচারের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

এক্ষেত্রে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকারি মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা অথবা সরকার বিবেচিত অন্য যে কোনো কর্তৃপক্ষের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর (ল্যাব টেস্ট বা ‘ফায়ার টেস্ট’ ও ‘হলমার্ক টেস্ট’ সুবিধাসহ) স্বর্ণ মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ যাচাই নিশ্চিতকরণে পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা/ আপগ্রেডিশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এবং এসব মান যাচাই কেন্দ্রের বাংলাদেশ অ্যাক্রোডিটেশন বোর্ড (বিএবি) অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হতে অ্যাক্রোডিটেশন গ্রহণ করতে পারে।’ স্বর্ণ আমদানি করতে প্রথমে স্বর্ণ আমদানির যাচাই কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলার তাগিদ দেওয়া হয়। স্বর্ণ আমদানির পর বাজারের স্বর্ণ কতটুকু মজুদ আছে, কতটা বিক্রি হয়েছে, সে সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করার তাগিদ দেওয়া হয়। যাতে বৈধপথে স্বর্ণ আমদানির পাশাপাশি অবৈধ পথে স্বর্ণ না আসে।

 
Electronic Paper