ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯

ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালার কথা জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বৃহস্পতিবার ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআর) নীতিমালা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গভর্নর এ কথা জানান। বর্তমান সময়ের শিল্প খাতের বৈশিষ্ট্যে দ্রুত পরিবর্তনশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা মূল্যায়নে ব্যাংকের দক্ষতা বাড়াতে নতুন এই নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।

নতুন প্রণীত আইসিআরআর নীতিমালায় বলা হয়, মূল্যায়নের ভিত্তিতে গ্রাহককে চার শ্রেণিতে বিভাজন করবে ব্যাংকগুলো। কোনো গ্রাহক ‘চমৎকার’ (এক্সিলেন্ট) বা ‘ভালো’ (গুড) রেটিং পেলে ব্যাংক তাকে অর্থায়ন করতে পারবে। ‘প্রান্তিক’ (মার্জিনাল) রেটিংধারী গ্রাহককে পুরোনো ঋণ নবায়ন বা নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে ‘অগ্রহণযোগ্য’ রেটিংধারীকে কোনো পরিস্থিতিতেই নতুন ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো, যদি না আগের ঋণ শতভাগ নগদ পরিশোধ হয় অথবা জামানত দিয়ে ঋণটি আচ্ছাদন করা হয়।

‘অগ্রহণযোগ্য’ (আনএকসেপ্টেবল) রেটিংভুক্ত গ্রাহকের আগের ঋণ সর্বোচ্চ দুবার নবায়ন বা বর্ধিত করা যাবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রেটিং করার ক্ষেত্রে একটি পার্টি বা গ্রাহকের পরিমাণগত সক্ষমতায় ৬০ শতাংশ নম্বর এবং গুণগত সক্ষমতায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকবে। পরিমাণগত সক্ষমতা সূচকে ৬০ নম্বরের মধ্যে মোট গৃহীত ঋণ ও আর্থিক সক্ষমতায় ১০, চলতি দায় ও তরল সম্পদে ১০, মুনাফার সক্ষমতায় ১০, সুদ পরিশোধের সক্ষমতা ও নগদ প্রবাহের ওপর ১৫, পরিচালনগত দক্ষতায় ১০ এবং ব্যবসার মানের ওপর পাঁচ নম্বর থাকবে।

এছাড়া গুণগত সক্ষমতায় ৪০ নম্বরের মধ্যে কার্যদক্ষতার আচরণে (পারফরম্যান্স বিহ্যাবিয়র) ১০, ব্যবসা ও খাত ঝুঁকিতে সাত, ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে সাত, জামানত ঝুঁকিতে ১১, সম্পর্ক ঝুঁকিতে তিন, পরিপালন ঝুঁকিতে দুই নম্বর থাকবে।

এই রেটিংয়ে কোনো গ্রাহক ৮০’র বেশি নম্বর পেলে তাকে ‘চমৎকার’, ৭০-এর বেশি এবং ৮০’র কম নম্বর পেলে ‘ভালো’, ৫৫-এর বেশি এবং ৭০-এর কম পেলে ‘প্রান্তিক’ এবং ৫৫-এর নিচে নম্বর পেলে ‘অগ্রহণযোগ্য’ রেটিং দেওয়া হবে।

তবে কোনো গ্রাহক গুণগত রেটিংয়ে যত নম্বরই পাক না কেন, পরিমাণগত রেটিংয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর না পেলে তাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ রেটিং দেওয়া হবে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে নতুন ঋণ, ঋণ নবায়ন ও বিদ্যমান ঋণ বর্ধিতকরণের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ রেটিং সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এ রেটিং পদ্ধতিটিকে ফলপ্রসূ করার জন্য কোন কোন খাতের গ্রাহকের রেটিং করতে হবে, তার কিছু খাত-উপখাত নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শিল্প খাতের মধ্যে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, খাদ্যপণ্য, ওষুধ, রাসায়নিক, সার, সিমেন্ট, সিরামিক, জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙা, পাটকল, ইস্পাত প্রকৌশল, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে, কৃষিভিত্তিক ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সেবা খাতের আবাসন ও নির্মাণ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, টেলিকমিউনিকেশন ও অন্যান্য সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে ঋণ দিতে হবে।

তবে ভোক্তাঋণ, ৫০ লাখ টাকার কম ঋণ আছে এমন ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠান, স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ, ক্ষুদ্রঋণ, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রেটিং অনুসরণ করতে হবে না।

নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী রেটিংয়ে অযোগ্য হলে কোনো গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া যাবে না এবং ব্যাংকগুলোর উচিত গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা। কোনো গ্রাহক যেন ঋণ খেলাপি না হয়।

তিনি বলেন, অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ, গ্যাসের জন্য যথাসময়ে উৎপাদনে যেতে পারে না। ঋণের অর্থ ব্যবহার করতে পারে না। আমাদের এবিষয়গুলো নজরে রাখা উচিত।

অর্থমন্ত্রীর কথার উদ্ধৃতি দিয়ে গর্ভনর আরো বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নন-পারফরমিং লোন বাড়ানো যাবে না। আমরাও এক লক্ষ্যে কাজ করছি।

এ ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রাণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮৬। আগামী ২০২১ সালে তা ডবল ডিজিটে পৌঁছাবে। একটি দেশের ব্যাংকিং সেক্টর শক্তিশালী না হলে অর্থনীতিও শক্তিশালী হয় না বলে জানিয়ে তিনি নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগে অর্থনীতি ও ঋণ ব্যবস্থা শক্তিশালী হবার বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এবিবি চেয়ারম্যান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআর) নীতিমালাটি সময়োপযোগী হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকার এটির যথাযথ ব্যবহারের জন্য আরো কর্মশালা করা জরুরি।

তিনি বলেন, ক্রেডিট রেটিংয়ের ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণ কেমন করে হিসাব করা হবে তা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক ভিন্ন ভাবে করতে পারে। সেক্ষেত্রে তা কেমন হবে তা যাচাই করা উচিত।

এ অনুষ্ঠানে ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআর) নীতিমালার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আবদুর রহিম, হোসনে আরা ও ড. প্রশান্ত কুমার।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৫ সালে ঋণ ঝুঁকি নিরসনে ক্রেডিট রিস্ক গাইডলাইন ম্যানুয়াল (সিআরজিএম) জারি করেছিল। এতদিন ওই ম্যানুয়াল অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নির্ণয় করে ঋণ বিতরণ করত। কিন্তু এখন চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সিআরজিএম ও আইসিআরআর দু‘টোই একসঙ্গে অনুসরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে এবং আগামী জুলাই থেকে কেবল আইসিআরআর অনুসরণ করবে ব্যাংকগুলো।

 
Electronic Paper