স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮
অতীতে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় উৎপাদন ব্যাহত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে রপ্তানি কার্যক্রমে ঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায়ও অভ্যস্ত ব্যবসায়ীরা। তবে, এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে সহিংস ঘটনা না ঘটায় স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা। তারা চান, নির্বাচনের বাকি দিনগুলোতেও এমন পরিবেশ বজায় থাকুক।
নির্বাচন এলেই দেশজুড়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়। বিগত ’৮০ দশক থেকে সবগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অনিশ্চয়তার মুখে। কখনো ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস্থানের কারণে বয়কটের মুখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কখনো কখনো নির্বাচন এগিয়ে এলেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে দেশজুড়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গত দুই দশকজুড়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে প্রায় গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ড, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, পেট্রোলবোমা বিস্ফোরণে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে-পরে তিন মাসের প্রতিদিন দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সে সময় একটি ব্যবসায়ী সংগঠন আরও সুনির্দিষ্ট করে বলেছিল দিনে গড়ে ক্ষতি দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি বলেছিলেন, হরতাল-অবরোধে ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে কোনো সন্দেহ নেই, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ক্ষতি হয়েছে এবং অনেক খাতের ক্ষতি অপরিমেয়।
দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবারের নির্বাচনী পরিবেশে খুশি। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার দেশে যে পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে আমরা স্বস্তিতে আছি। সামনে নির্বাচনের বাকি যে দিনগুলো আছে আমরা আশা করছি এমন শান্ত পরিবেশ চলমান থাকবে।
দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা আর কোনোভাবেই চাই না দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হোক, বন্ধ হয়ে যাক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ফিরে আসুক সহিংসতা অথবা মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে স্বজনদের কাছে লাশ হয়ে ফিরুক।
দেশের কর্মসংস্থান, রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য শান্ত ও স্বস্তির পরিবেশ চাই। পাশাপাশি, দেশে রাজনৈতিক পালা বদলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের সুখবর এসেছে। এ সময়ে কৌশলগত ৬ দশমিক ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ দশমিক ৮৮০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানির এই উল্লম্ফনকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফসল বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, নির্বাচন এলেই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে থামিয়ে দেওয়ার অস্থির পরিবেশ না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে হলে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিও ধরে রাখা প্রয়োজন।
এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সতর্ক থাকার বার্তা পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে মজুরি বকেয়ার অজুহাতে কোনো অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে কোনো অশুভ শক্তি তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারবে না। এবার দেশে স্থিতিশীলতা আছে।
বিরোধী জোটের ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়া ও সরকারি দলের নেতৃত্বে জোটের পক্ষ থেকে বিষয়টি গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ বলে মনে করেন দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা নেতা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে অংশীজনরা আগের চেয়ে সচেতন। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কর্মকাণ্ড কেউই মেনে নেবে না।