ব্যাংক ঋণের জামানত হচ্ছে অস্থাবর সম্পত্তি
জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এসএমই ঋণ বিতরণ সহজ করতে অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসাবে গণ্য করা হবে। ছোট্ট (ক্ষুদ্রঋণ) উদ্যোগে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জামানত যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে, এ জন্য আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, জমির ফসল, ঘরের গহনা, খাট, সাইকেল, ব্যাংকে রক্ষিত সম্পদ, গৃহপালিত পশু, ব্যবহারের পণ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসাবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসাবে দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধন করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ থাকবে। কর্তৃপক্ষ অস্থাবর সম্পত্তি দেখে বাজার মূল্য নির্ধারণ করে সনদ দেবে। পাশাপাশি ওই সম্পত্তিকে মার্ক করে দেবে। ওই সনদের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবে গ্রাহক। এ জন্য ‘মুভবেল কোলেটারাল রেজিস্ট্রি সেটাপ ইন বাংলাদেশ’ একটি আইন করা হবে। এ আইন প্রণয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষম ও পরিণত এক স্মারক হিসেবে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, এটা একটি ভালো উদ্যোগ।
এর মাধ্যমে ছোট্ট গ্রাহকরা-যাদের একটি ব্যবসা পরিকল্পনা আছে বা পুরাতন ব্যবসায় নতুন করে কিছু অর্থায়ন প্রয়োজন, কিন্তু জামানত হিসাবে স্থাবর সম্পত্তি না দিতে পারার কারণে ওই ব্যক্তি ঋণ নিতে পারছে না। তবে ওই উদ্যোক্তার অস্থাবর সস্পত্তি আছে। আইন না থাকার কারণে ওই অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারল না। এর ফলে সম্ভাবনা থাকার পরও একটি ভালো উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে পারল না। অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসাবে কার্যকরের আইন করতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ উদ্যোগ কার্যকর হলে ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আরও একটি শুভ সূচনা হবে। তবে টাকা নিয়ে তা ফেরত দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, জমির ফসল, ঘরের গহনা, খাট, সাইকেল, ব্যাংকে রক্ষিত সম্পদ, গৃহপালিত পশু, ব্যবহারের পণ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসাবে বিবেচিত হবে। ঋণ নেওয়ার আগে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মার্ক ও সনদের ভিত্তিতে ঋণের আবেদন করবে। এরপর ঋণ দেওয়া কর্তৃপক্ষ নিবন্ধক কর্তৃপক্ষের সনদের ভিত্তিতে ঋণ দেবে। অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ঋণদাতা সংস্থা নিবন্ধকের তথ্য ভাণ্ডার অনুসন্ধান করে দেখবে একই সম্পত্তি জামানত হিসাবে রেখে আগে কখনো ঋণ নিয়েছে কি না। একই সম্পত্তি জামানত হিসাবে রেখে কখনো ঋণ নিলে তা অগ্রাহ্য হবে।
বড় ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) সংরক্ষণ করা হয়। কোনো নতুন গ্রাহক ঋণ নিতে গেলে সিআইবির তথ্যভাণ্ডার দেখা হয়, ওই গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে কি না এবং খেলাপি কি না সে জন্য। ক্ষুদ্র এসব ঋণও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে জমা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে এ ধরনের উদ্যোগ নিলেও তা থেমে যায়। মূলত, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত না হওয়া ও বিস্তৃত না হওয়ার কারণে এ উদ্যোগ থেমে যায়। দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন ধারায় পুষ্ট হওয়ার কারণে আবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগ নিচ্ছে, এটা একটি ভালো খবর। এবার এ উদ্যোগ সফল হবে। তবে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার যে মনোভঙ্গি ব্যবসায়ীদের তা আগে বদলাতে হবে বলেও মনে করেন ব্যাংকাররা।
অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসাবে ব্যবহার ব্যবস্থা কার্যকর হলে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ সহজ হবে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ক্ষুদ্র (মাইক্রো ক্রেডিট) ঋণের জামানত না থাকার কারণে তা প্রান্তিক মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে এবং এ ঋণের কার্যকারিতাও বেশি। তবে এ ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্বও হচ্ছে। এসএমই এর মধ্যে ছোট্ট ঋণের ক্ষেত্রে অস্থায়ী সম্পত্তি জামানত ব্যবহার করা গেলে ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগ পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। তবে এ আইন কার্যকর করার আগে বিভিন্ন অংশীজনের মতামতও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেশ প্রয়োজন হবে।