ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষিঋণ বিতরণে বিপর্যয়

জাফর আহমদ
🕐 ১০:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৮

কৃষি ঋণ বিতরণে বড় ধরনের ছন্দ পতনের ঘটনা ঘটেছে। জুলাই-অক্টোবর চার মাসে কৃষি ঋণ বিতরণে অধিকাংশ ব্যাংক লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে কৃষিঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে জুলাই-অক্টোবর চার মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মাত্র ৫ হাজার ৩৫২ কোটি  টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশ এবং একই সঙ্গে আগের বছরের চেয়ে কম ঋণ বিতরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আগের বছর একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল ৬ হাজার ২০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৫২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কম বিতরণ হয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন থেকে কৃষিঋণ বিতরণকে বাধ্যতামূলক থেকে ঐচ্ছিক করার দাবির পর কৃষি ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার বিষয়টিকে একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন ব্যাংকারকারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব তফসিলি ব্যাংককে তাদের মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে হয়। কোনো কারণে কোনো ব্যাংক ২ শতাংশ ঋণ কৃষকদের মাঝে বিতরণে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। এ কারণে যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, ওই সব ব্যাংক এনজিও সংযোগের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করে। এ কাজকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাড়তি ঝামেলা বলে মনে করে। কৃষি ঋণের বর্তমান গতিকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি খোলা কাগজকে তিনি বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বছরের চার মাসে কম বিতরণ হয়েছে, বাকি আছে ছয় মাস। এ সময়ের কোনো একটি মৌসুমে বেশি বিতরণ হয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ৫৫টি ব্যাংকের মধ্যে ছয়টি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ শুরুই করেনি। সাত বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ শুরু করলেও বিতরণের হার এক বা দুই শতাংশ। যে সব ব্যাংক এখনো কৃষিঋণ বিতরণ শুরুই করেনি, সে সব ব্যাংক হলো- বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি  সিটি ব্যাংক-এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও উরি ব্যাংক। এছাড়া দেশি বেসরকারি মধুমতি ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক।  
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে নির্ভুলযোগ্য প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত। এসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে শাখা থাকার কারণে নিজেদের শাখার মাধ্যমেই সরাসরি কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারে। এছাড়া ঋণের পরিমাণও বেশি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে এসব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিতরণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এ সময় এসব ব্যাংক বিতরণ করেছে  ২ হাজার ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে বিতরণ করেছিল ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু কমেছে দেশি-বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণ। জুলাই-আগস্ট চার মাসে বেসরকারি ৪৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে বিতরণ করেছিল ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বেসরকারি এ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ কমেছে ১ হাজার ৭৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে বাধ্যতামূলক থেকে ঐচ্ছিক করার যে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে করেছিল তারই প্রতিফলন এ তথ্যে হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষি ঋণ বিষয়ক ব্যাংকারকার।

 
Electronic Paper