ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেগুনে আগুন, নাগালে কাঁচা মরিচ ধনে পাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৮

পবিত্র রমজান মাস শুরু হলো আজ। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজধানীর কাঁচাবাজারে রমজানের প্রভাব পড়ে গেছে। হু হু করে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম।

বিশেষ করে বেগুনের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। রোজার প্রথম সপ্তাহেই হয়তো এ সবজিটি সেঞ্চুরি করবে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকার ওপরে। আদা, রসুন ও পিয়াজ, সব ধরনের শাকসবজি, টমেটো, পেঁপে, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, শিম, কপি, মুলা ও পটলের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। রমজানে চাহিদা থাকা মুড়ি, ছোলা, ডাল ও চিনির দামও বেড়েছে। বেড়ে কলার দামও। চাল ও মাছ-মাংস ও ডিমের দাম অনেকটাই স্থিতিশীল। তারপরও এগুলোতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত সপ্তাহেই। তবে কাঁচা মরিচ ও ধনে পাতার দাম রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা পকেট কাটা শুরু করেন।
রাজধানীর মালিবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, মগবাজার ও রামপুরার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছেÑমানভেদে প্রতি কজি দেশি পিয়াজ ৪০-৫০ টাকা ও আমদানি পিয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীন থেকে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১১০-১২০ টাকা। দেশি রসুন কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দেশি আদা ৮০ টাকা। আমদানি আদা প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনের দাম বেড়েছে বাজার ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসার দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা, ধুন্দল কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, ঝিঙা ও চিচিঙা বেড়েছে ১৫ টাকা, পটলের দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। এ ছাড়া সব ধরনের শাকেরই আঁটিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে মসলা জাতীয় সবজি, ডিম, মাছ ও মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাংস ও মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা, মুরগি ব্রয়লার ১৬০ টাকা কেজি প্রতি, কক মুরগি (পাকিস্তানি) ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বেগুনের বাজারে আগুন
রাজধানীর বাজারে বেগুনের দামে দেখা দিয়েছে রোজার উত্তাপ। কয়েক দফা বেড়ে বেগুন কেজিতে ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। কিছুদিন পর বেগুনের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের শুরু থকেই বেগুনের দাম বাড়ছে। এপ্রিল মাসে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম মে মাসের শুরুতেই এক লাফে বেড়ে হয় ৭০ টাকা। দ্বিগুণ বাড়ার পরও এ সবজিটির দামের উল্লম্ফন থামেনি। আরও কয়েক দফা বেড়ে এখন অনেক বাজারেই ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শান্তিনগরের এক ব্যবসায়ী বলেন, রোজার সময় বেগুনের দাম কিছুটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে? এখন তো ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন পর বেগুনের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।।
কাঁচা মরিচ-ধনেপাতায় চমক
অতীতের সব প্রথা ভেঙে চমক দেখাচ্ছে কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা। মাসের অধিক সময় ধরেই এ দুটি পণ্যের দাম স্থিতিশীল। এমনকি কাঁচা মরিচ-ধনেপাতায় রোজার উত্তাপের প্রভাবও পড়েনি। বাজার ভেদে আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১০-২০ টাকায় ও ধনেপাতা ২৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা ও ধনেপাতা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, রোজা উপলক্ষে এবার কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতার দাম বাড়েনি। প্রায় দুই মাস ধরে আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়াইশ গ্রাম ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। অথচ অন্য বছরগুলোয় রোজা শুরু হওয়ার আগেই এ দুটি পণ্যের দাম বেড়ে যেত। রামপুরায় ক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরেই এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০ টাকায় কিনছি। এক পোয়া ধনেপাতা কিনেছি ২৫ টাকায়। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতার যে দাম তাতে তো কিছুটা হলেও ¯^স্তি আছে।
বাড়ল ছোলা ডাল চিনির দাম
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কম। মজুদও পর্যাপ্ত। তাই এবার রমজানে মূল্যবৃদ্ধি পাবে না বলে দাবি করেছিল সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। তারপরও রোজার আগেই বেড়ে গেল নিত্যপণ্যের দাম। ছোলার দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। শুধু ছোলাই নয় বেড়েছে ডাল ও চিনির দামও। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। রাজধানীর মুগদা, শান্তিনগর, মালিবাগসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়, খেসারি ডাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, ডাবলি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও ভালোমানের মসুর ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে কেজিতে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়।
বেড়েছে মুড়ির দাম
রমজান সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির দাম। প্রতি কেজি খোলা মুড়ির দাম ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মুড়ির খুচরা ব্যবসায়ী, ক্রেতা এবং কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে মুড়ির দাম বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ দোতলা মসজিদ এলাকার দোকানদার বাবুল হোসেন বলেন, এখন মুড়ির কেজি ৬৫ টাকা। আগে এ মুড়ি ৬০ টাকায় বিক্রি করতাম। আল্লাহর দান স্টোরের দোকানদার শাহীন বলেন, আমি শুধু রমজানেই মুড়ি বিক্রি করি। প্রতি কেজি মুড়ি ৭০ টাকা। যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া গোবিন্দপুর বাজারের মুড়ি, চিঁড়া ও গুড়ের দোকানি মো. রাসেল বলেন, আমরা তিন ধরনের মুড়ি বিক্রি করি, সুপার (বড় আকারের মুড়ি) প্রতি কেজি ৭০ টাকা আর ¯^র্ণা (ছোট আকারের মুড়ি) ৬৫ টাকা। প্রতি কেজি মুড়িতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে জানিয়ে রাসেল বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মুড়ির দাম আরও বাড়বে। কারণ তখন চাহিদাও বাড়বে। শনির আখড়া আন্ডার পাসের উত্তর পাশে ফুটপাতে বসে মুড়ি বিক্রি করছিলেন শাহ আলম। রমজানে মুড়ির চাহিদা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রমজান আইলে মুড়ি বেচি। এ সময়ে দাম একটু বেশি হয়। এবারও বেড়েছে। বরিশালের হাতে ভাজা মুড়ি প্রতি কেজি ১২০ টাকা। আগে দাম ছিল ১০০ টাকা।’
উত্তাপ নেই খেজুরে
রমজান আসার মাস খানেক আগেই খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দামও কিছুটা বাড়ে। তবে অতীতের এমন অভিজ্ঞতা চোখে পড়েনি এবার। আজ রমজান শুরু হলেও খেজুরের বাজারে এর প্রভাব যেন নেই। রাজধানীর বাদামতলী, রামপুরা, মতিঝিল, কারওয়ানবাজার ও বাড্ডা অঞ্চলের খেজুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাদামতলীর বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের খেজুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার মধ্যে। রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানের খেজুর ১২০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। প্যাকেট করা বিশেষ খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 
Electronic Paper