ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডলার সংকটে এলসি খোলা ব্যাহত

বাকিতে আমদানি হবে রোজার পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

বাকিতে আমদানি হবে রোজার পণ্য

বাকিতে রোজানির্ভর পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বায়ার্স ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে। ডলার সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের ঋণের মাধ্যমে পণ্য আমদানির এলসি খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এর মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া ঋণ জুনের মধ্যে পরিশোধের সময় পাওয়া যাবে।

 

রমজান শুরু হতে বাকি আর মাত্র ২ মাস। এ মাসের পণ্য আমদানির জন্য রোজা শুরুর ৪ থেকে ৫ মাস আগে এলসি খুলতে হয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে উদ্যোক্তারা এলসি খুলতে পারছিলেন না।

গত ১ মাস আগে রোজার পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার জোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও এলসি খোলা প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোজানির্ভর পণ্য আমদানিতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে ব্রাজিল থেকে বাকিতে চিনি ও ছোলা আমদানিতে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এ খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এছাড়া ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বাকিতে পণ্য আমদানির জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়াতে ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। গত অর্থবছরে বাকিতে বায়ার্স ক্রেডিটের (আমদানিকারক যে ঋণের সংস্থান করেন) মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এছাড়া সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট বা সরবরাহ ঋণের আওতায়ও শিল্পপণ্য আমদানি বেড়েছে।

সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের স্থিতি রয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এগুলো পরিশোধের মেয়াদ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন যেসব ঋণ নেওয়া হবে সেগুলোর মেয়াদও হবে জুন পর্যন্ত।

তবে যেসব ঋণের মেয়াদ চলমান থাকবে সেগুলো জুনের পরও পরিশোধ করা যাবে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার জোগানের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। তবে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক মন্দায় রপ্তানি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, রোজানির্ভর ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হচ্ছে। এ খাতের আমদানিতে ডলারের জোগান বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে যেসব ডলার পাচ্ছে তার একটি অংশও রোজার পণ্য আমদানিতে ব্যয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে রোজানির্ভর পণ্য আমদানিতে ডলারের সংকট হবে না বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

তবে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে শতভাগ মার্জিন দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হয়। এখন শতভাগ মার্জিন দিয়েও এলসি খোলা যাচ্ছে না। রোজার পণ্য আমদানির জন্য ৪ থেকে ৫ মাস আগে এলসি খোলা হয়।

কিন্তু এখন আছে মাত্র ২ মাস। এ সময়ে সব পণ্য আমদানি করে রোজার আগে দেশে আনা সম্ভব হবে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামও বেশি পড়ছে। বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। বাড়তি দামে পণ্য এনে তা বিক্রি করাও কঠিন। এসব কারণে তারা পণ্য আমদানি কম করছেন।

মৌলভীবাজারের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সোহেল রহমান জানান-ডলার, পণ্যের দাম, জাহাজ ভাড়া অনেক বেশি। এগুলো দিয়ে পণ্য আমদানি করতে খরচ হচ্ছে বেশি। সরকারের তদারকির কারণে এত দামে পণ্য বিক্রি করা যায় না। এছাড়া অনেক দেশ এখন ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

ব্যাংকাররা জানান-ডলারের দাম বৃদ্ধি, সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যমান অনিশ্চয়তার কারণে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে তারা এলসি খুলছেন কম। এখন দাম বেশি। এলসি খোলার পর দাম হঠাৎ কমে গেলে লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হবে। এতে খেলাপি হওয়ার ভয় থাকে।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রোজায় বাজারে পণ্যের কোনো সংকট হবে না। দামও বাড়বে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি হচ্ছে। আগের পণ্যও মজুত রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি এই ৭ মাসে চিনি, ফল, পেঁয়াজ, মসলা ও অন্যান্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা ও আমদানি দুটোই কমেছে। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের এলসি খোলা কমেছে আমদানি বেড়েছে। ভোজ্যতেল, ডাল ও ছোলার এলসি খোলা ও আমদানি দুটোই বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় ২৭টি দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে পাকিস্তান, লেবানন, কসোভো, আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, বেলারুশ, ভারত (সীমিত আকারে) চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া, ইরান, তুরস্ক, চীন থেকে নানা ধরনের খাদ্য উপকরণ রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বাজারে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের সংকট রয়েছে।

 
Electronic Paper