ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যাংকের এমডিদের সুরক্ষা শুধু কাগজে থাকলেও বাস্তবে নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

ব্যাংকের এমডিদের সুরক্ষা শুধু কাগজে থাকলেও বাস্তবে নয়

ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহী পদ হলো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পর্ষদে কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন করতে চাইলে সেই অ্যাজেন্ডা এমডিকেই উপস্থাপন করতে হয়। পর্ষদে অ্যাজেন্ডা অনুমোদিত হলে সেই দায়ও পড়ে এমডির ওপর। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে ব্যাংকের এমডির সম্পর্ক হয়ে ওঠে অম্ল–মধুর। এর জেরে এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন পরিচালকেরা। এ রকম সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে।

 

এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে অর্থাৎ এমডিদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো এমডি স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে চাইলে এক মাস আগে পদত্যাগের কারণ জানিয়ে আবেদন নিজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কারও চুক্তি বাতিল বা কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

পর্ষদের কোনো অবৈধ চাপ এলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে, গণমাধ্যমেও বলতে পারেন তাঁরা। তাহলেই সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু নিজে অনিয়মে জড়িত হলে সবার সৎসাহস থাকে না।
আহসান এইচ মনসুর নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর ন্যাশনাল ব্যাংকেই একাধিক এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের সময় একই পরিণতি হয়েছে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিরও। আবার সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের দুই এমডিকেও মেয়াদ শেষের আগে পদত্যাগ করতে হয়।

এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি, পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পরের এমডিকে দ্রুত অনুমোদন দিয়েছে। ফলে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ আদেশ কার্যত ঘোষণাতেই বন্দী রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো এমডিকে সুরক্ষা দিয়েছে, সেই নজির নেই।

এ নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশে ব্যাংক আছে ৬০টির বেশি। যোগ্য এমডি আছেন সর্বোচ্চ ১৫ জন। যেসব ব্যাংকের পর্ষদ ভালো, তাদের এমডিও দক্ষ এবং পেশাদার হয়ে থাকেন। তবে যোগ্য না হলেও সব এমডিরই সৎসাহস থাকা প্রয়োজন।

পর্ষদের কোনো অবৈধ চাপ এলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে, গণমাধ্যমেও বলতে পারেন তাঁরা। তাহলেই সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু নিজে অনিয়মে জড়িত হলে সবার সৎসাহস থাকে না। তা না থাকলে এমডি পদে থাকাই উচিত না। এমডি পদ তো শুধু একটা চাকরি না, একটা বড় দায়িত্বও।’

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে এক সভায় বলেছেন, পর্ষদ থেকে কোনো অনিয়মের চাপ এলে তা যেন বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এমডিদের সুরক্ষা দেবে।

এরপরও যাতে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা না হয়। গভর্নর এমডিদের এ বার্তা দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয় আলোচনায় আসার পর।

তবে ব্যাংক এমডিরা এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। কারণ, কয়েকটি ব্যাংকের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংক হারিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানেনি ব্যাংকটি।

যদিও ১৫ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বাইরের কোনো চাপকেই তিনি চাপ মনে করছেন না। তাতেও আস্থা রাখতে পারেননি ব্যাংকাররা। আর কিছু ব্যাংকের পরিচালক তো কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে মানতে চান না।

এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেনকে সিকদার পরিবারের বনানীর বাসায় ডেকে পাঠানো হয়। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার উপস্থিত ছিলেন।

এমডিকে তাঁদের পছন্দের দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে পাঠানোর জন্য বলা হয়। এতে রাজি না হলে সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় মেহমুদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার তিনি ব্যাংকটি থেকে পদত্যাগ করেন।

 
Electronic Paper