নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত এক হাজার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)-এর সঙ্গে যৌথভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, দেশের সম্ভাবনাময় এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পরিকল্পিত শিল্পায়ন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে বেসরকারি ডেভলাপারের অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। বেজা ২০১৩ সাল থেকে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তনে কাজ করছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাদের সূচনা করেন।

২০১৯ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েকটি শিল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সবশেষে গত ২০ নভেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিনিয়োগে এরইমধ্যে চুক্তি সই হয়েছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার ও জার্মানির কোম্পানি রুডলফের সঙ্গে। আরো ৪০টি কোম্পানি সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। যারমধ্যে ৩০টি কোম্পানি জাপানের। বাকি দশটি অন্য দেশের। ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন জাপানের দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার কথা জানান তিনি। তবে ওই দুটি কোম্পানির নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যদিও অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, জাপানের ওনদা করপোরেশন ও নিক্কা কেমিক্যালসের সঙ্গে ৬ ডিসেম্বর সরকারের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওনদা করপোরেশন ১০ একর, নিক্কা দশ একর জমি বরাদ্দ পাচ্ছে। ওনদা সেখানে গ্যাস মিটার প্রস্তুত করবে। আর নিক্কা কেমিক্যালস তৈরি করবে।
জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার ও জাপানের শেয়ার কত জানতে চাইলে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বেজার শেয়ার থাকছে ২৪ শতাংশ, জাইকার ১৫ শতাংশ এবং সুমিতমো করপোরেশনের ৬১ শতাংশ।

তিনি বলেন, উদ্বোধনের পর কোম্পানিগুলো কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবে। আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে কারখানা থেকে উৎপাদন শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথ চলা শুরু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ২০১৬ সালে জাইকা বাংলাদেশে একটি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় এবং একই বছর জাপান সরকার বিশ^খ্যাত প্রতিষ্ঠান সুমিতমো করপোরেশনকে ডেভলপার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে।

২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মত প্রদান করে। পরবর্তীতে যৌথ উদ্যোগে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালে বেজা ও সুমিতমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বেজা ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও ভূমিক উন্নয়ন কাজ শুরু করে। জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক, রিটেনশন পন্ড, নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।

ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)-এর সঙ্গে যৌথভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বেজা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাউয়াচি, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক সালেহ আহমেদ, বেজার নির্বাহী সদস্য ইরফান শরীফ, আবদুল আজীম চৌধুরী, ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ উজ জামানসহ অন্যরা।