ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি তিন এনআরবি ব্যাংক

জাফর আহমদ
🕐 ১০:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০১৮

প্রবাসীদের আয় দেশে আনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তিন এনআরবি ব্যাংক। কিন্তু প্রতিষ্ঠার তিন বছরে ব্যাংক তিনটি কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারেনি। কথা ছিল দেশে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বাইরে ব্যাংকিং করবে এ তিন ব্যাংক। সেটাও পারেনি তিন ব্যাংক। দেশে কর্মরত প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ব্যবসাকে ভাগ-বাটোয়ারা করার মধ্য প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বৃত্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে এসব ব্যাংক।

দেশের দুই প্রধান বৈদেশিক আয়ের প্রধান খাতটি হলো প্রবাসী আয়। এ প্রবাসী আয়ের একটি অংশ শুধু দেশের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়; যা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসে। বড় একটি অংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। এ টাকা গ্রামের কৃষকের কাছে পৌঁছলেও ওই অর্থের পরিবর্তে গোপন পথে সমপরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর বড় একটি অংশ, যারা বিদেশে দক্ষ জনশক্তি ও ব্যবসা বাণিজ্য করে, তাদের আয় বিদেশেই থেকে যায়।

সরকারের উদ্দেশ্য ছিল তিন এনআরবি ব্যাংক এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড প্রবাসীদের এ অর্থ দেশে আনার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। কিন্তু এ অর্থ আনার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারেনি ব্যাংক তিনটি।

যেসব প্রবাসী রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তারা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী বা ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যাচ্ছে। এসব বিদেশমুখী শ্রমিকের অবদানের কথা চিন্তা করে সরকার তাদের কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়। তাদের ঋণ দিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক কাজ করছে। রেমিটেন্স নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তিন এনবিআর ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় সরকার ভেবেছিল বিদেশমুখী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে তারা কাজই শুরু করতে পারেনি।

তথ্য অনুযায়ী ৫৮টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৫৭টি ব্যাংকই বিদেশগামী শ্রমিকদের ঋণ দেয় না। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এনআরবি, এনআরবিসি ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের বিশেষ প্রডাক্ট (ঋণের ধরণ) থাকলেও নেই বিদেশগামীদের ঋণ। রেমিটেন্স সংগ্রহে তৎপর হলেও বিদেশে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে এ তিন ব্যাংকের ভূমিকাও শূন্যের কোটা কাছাকাছি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে বৈঠকে হতাশা ব্যক্ত করে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর দাবি, এসব ব্যাংক নতুন। প্রবাসে কর্মসংস্থানে ঋণ গ্রহণেচ্ছুকরা গ্রামে থাকে। তাই গ্রামাঞ্চলে শাখা খুলতে হবে। অথচ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক শহরে ২৮টি আর গ্রামে ২০টি শাখা খোলে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৬২টি শাখার মধ্যে ৫৩টিই ঢাকার বাইরে। এনআরবি ব্যাংকের ঢাকায় ৯টি শাখা আর ঢাকার বাইরে রয়েছে ২৮টি।

এ প্রসঙ্গে এনআরবি (গ্লোবাল) ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার গণমাধ্যমে বলেন, আমরা প্রবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করি। তাদের গৃহায়ণ ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ঋণ দিয়ে থাকি কিন্তু প্রবাসীদের বিদেশ গমনে ঋণ বিতরণ শুরু করিনি। আমাদের নতুন ব্যাংক। এ ঋণ বিতরণে আমাদের আরও সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিদেশগামী শ্রমিকদের ঋণ জামানতহীন হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এসব ব্যাংকের ম্যানেজাররা ঝুঁকি নিতে চান না। এ জন্য বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বিদেশ গমনেচ্ছুক শ্রমিকরা ঋণ পায় না। একইভাবে তারা বিদেশে থেকে ঋণ আনার ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের ধারায় বাইরে রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পারছে না।

সাধারণ ব্যাংকিং করেও মাত্র তিন বছরে এনআরবি ব্যাংক তিনটির খেলাপি ঋণের হার বেসরকারি ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং করার পরও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের গড় হার ৬ শতাংশ। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপির হার ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। এনআরবি ব্যাংকের গড় হার ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

 
Electronic Paper