বৃষ্টির দিনে সবজির বাজারে আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:০৪ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২২
সরকার নির্ধারিত মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি হলেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিম,মুরগি, পেঁয়াজ, আদা, রসন, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম। এসব কাঁচা সবজিতে কেজি প্রতি ৮-১২ টাকা বেড়েছে। বেগুন পৌঁছেছে ৮০ টাকার ঘরে, যা ১০০ টাকা ছুঁতে তেমন বেশি একটা সময় নিবে না। সবজির বাজারের অস্থিরতার মাঝেও কিছুটা স্বস্থির বাতাস বইছে চালের বাজারে। ফাইজাম-মিনিকেটসহ অন্যান্য চালের কেজি প্রতি ২-৪ টাকা কমেছে।
আজ সরেজমিনে মহাখালীর কাঁচাবাজার, কাওরানবাজার ও গুলশান-১’র কাঁচা বাজার ঘুরে দেখাযায়, আদা, রসন, পেঁয়াজের মতো মশলাজাতীয় সবজিতে ১০ টাকা, মরিচে ৪০ ও পেঁপেতে কেজি প্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এসব বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, দেড়শ ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, (লম্বা) বেগুন ৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতিপিস ৫০ টাকা, পাতা কপি ৪০ টাকা, করলা ৬০-৭০টাকা, গজপতি কেজি ৫০ টাকা, চালকুমড়া পিস৪০-৫০টাকা, প্রতি পিস লাউ আকার-ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮৫ টাকায়, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫-৫৫ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৫০টাকা।
গত সপ্তাহ আগেও যে কোনো কপি (পাকা-ফুল) পিচ প্রতি ৩০-৩৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, তেলের মতো কাঁচা সবজির বাজারেও ( মূল্যে )আগুন লেগেছে। এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্তদের মরণ ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
মহাখালীর কাঁচা বাজারে আসা ওয়াহিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ঈদের আগ থেকে সয়াবিন তেলের বাজারে এক ধরেেণর কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে ঈদের পরে প্রতি কেজি ভোজ্যতেলে ৪০ টাকা করে বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। এখন তেল ব্যবসায়ীদের পথেই সবজি ব্যবসায়ীদের হাটতে দেখা যাচ্ছে। এখানে প্রায় পত্যেক সবজির কেজিতে তারা ১০-১৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। এটা এক ধরণের অন্যায় ছাড়া আরকিছু বলার নেই।
পরিবারের জন্য সপ্তাহের বাজার সারতে গুলশান-১’র কাচা বাজারে আসেন হৃদয়। বাজারের বিষয় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিস থাকায় সপ্তাহে একদিন বাজারে আসার সুযোগ পাই। এরমধ্যে আজকেএসে দেখি গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতিটি কাচা সবজির কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের চলার অবস্থা থাকলেও নিন্ম মধ্যবিত্তরা কিভাবে চলবে তাই ভাবছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারের তেল কান্ডের ঘটনা এখন সবার কাছে স্পষ্ট। ভোক্তা অধিকারের অভিযানে অনেক যায়গায় আগের দামে কেনা তেলে মজুত রাখা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা যেভাবে অসৎ উপায়ে হাঁটছে সেভাবে চলতে থাকলে অনেক মানুষ খুদার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সাথে জড়াতে বাধ্য হবে।
মহাখালী কাঁচা বাজারের খুচরো পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন,ঈদের পর থেকেই কাঁচা সবজিসহ অন্যান্য নিত্য-পণ্যের মূল্য বেশির দিকে। প্রতি কেজি সবজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে খুচরো বাজারে। পাইকার বাজারে দাম বাড়ার ফলে খুচরো বাজারেও এমন দাম বেড়েছে। তবে অনেকে বলছেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবের ফলে সারা দেশ থেকে সবজিসহ মাছ-মুরগি-বাহী ট্রাক প্রবেশ করতে না পারা সব চেয়ে বড় কারণ।
বাজারের প্রবেশ মুখেই, আলু, পটল, চিচিঙ্গা, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি সাজিয়ে বসেছেন আকবর আলী। এ সবজি বিক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা কাওরান বাজারে গিয়ে ঠিকঠাক সবজি পাচ্ছিনা। যাও পাচ্ছি তা কেজিতে ৫-৬ টাকা বেশি খরচে আনতে হচ্ছে। পথে আমাদের লেবার ও বাজারে দোকান ভাড়ার খরচসহ প্রায় কেজিতে ১১-১৩ টাকার মতো পড়ে যায়। যার ফলে আমারা কেজিতে ২ টাকা লাভে বিক্রি করতে মূল্য বৃদ্ধি কেজি প্রতি বাড়তি ১৫ টাকার মতো পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে আমরাই মচিস ৪০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকায়, পেঁয়াজ ৩৫, বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন বাজার ঊর্ধ্বগতিতে থাকায় আগের দামে বিক্রি করতে পারছিনা।
বাজারের পাশে দোকানী শরীফের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি পিচ ডিমে ১.৫ টাকা বেড়ে ডজনে ১২০ টাকা হয়েছে। যা গত সপ্তাহের বিক্রি ছিলো ১১০ টাকা। তবেচালে কেজি প্রতি ২-৪ টাকা কমেছে। ফাইজার বর্তমানে ৪৮, মিনিকেট ৬২ টাকা (পূর্বে ৫০, ৬৫ ) বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, মরিচ, পেঁপে ছাড়া অন্যান্য সবজির মূল্য অপরি বর্তিত রয়েছে। আলু পূর্বের দর ২০ টাকা, চিঙ্গা, ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগী ব্যবসায়ী ইউসুফ বলেন, রোজার আগে থেকে বয়লার কেজি প্রতি ১৬০ টাকা, পাকিস্তানি ও দেশি মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে সব মুরগিতে কেজি প্রতি প্রায় ২০টাকা করে বেড়েছে।
মুরগি ছাড়াও গোস্তের মধ্যে গরু ৭০০ টাকা, খাসি ৯’শ ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, ব্রয়লারমুরগি ১৭৫-১৮০টাক, পাকিস্তানি লাল ৩০০-৩২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।