পদ্মায় থেমে নেই ইলিশ শিকার
মাদারীপুর প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৮
ডিম ছাড়তে মা ইলিশ ছুটে আসে পদ্মায়। ইলিশের এ প্রজনন মৌসুম তাই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে কিছুদিন। যাতে করে মা ইলিশগুলো নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। তবে চিত্র ঠিক উল্টো! নিষিদ্ধ মৌসুমেও থেমে নেই শিবচরের চারজানাত বন্দরখোলা ও কাঁঠালবাড়ি এলাকার পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকার। দেদার ইলিশ শিকার করছে জেলেরা।
এদিকে, অভিযানকারী প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশের বাসার ফ্রিজভর্তি মাছ রয়েছে বলে এলাকাবাসী ও আটককৃত জেলেরা জানান। কারণ উদ্ধারকৃত মাছ এ পর্যন্ত কোনো এতিমখানা বা লিল্লাহ বোডিংয়ে প্রদান করা হয় নাই।
শিবচর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, গত ৭ অক্টোবর থেকে গতকাল রোববার ৩৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাঁচজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৮০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও চারশ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মাছ ৮টি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।
ইলিশ কিনতে আসা আসলাম জানান, তিনি প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা থেকে এসেছেন। এ সময় পদ্মার পাড়ে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায়, এ খবরে তিনি মাছ কিনতে এসেছেন। তার দিনমজুর পিতার পক্ষে অন্য সময়ে দাম দিয়ে ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না। তাই সস্তায় একটু বড় ইলিশ কিনতে কষ্ট করে এ দুর্গম চরে এসেছেন।
জেলেরা জানান, পদ্মায় মাছ শিকারকারী জেলেরা বেশিরভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল, নৌকা কিনে পদ্মায় মাছ ধরেন তারা। ফলে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতেই হচ্ছে। তা ছাড়া সংসারের খরচ তো আর থেমে নেই। তাই মাছ শিকার বন্ধ করা আর হয়ে ওঠে না। মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় জেলেদের সরকারিভাবে সাহায্য দেওয়ার কথা কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য আমরা পাই নাই।
শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ টি এম শামসুজ্জামান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে। দিনের পুরোটা সময়ই আমরা পদ্মায় নজর রাখছি। তা ছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করতে চেষ্টা করছি। তারপরও সাধারণ মানুষের ভিড় পদ্মার পাড়ে লেগে থাকে।
তিনি আরও বলেন, মাছ ধরা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি। জেলেদের আটক, মাছ জব্দ এবং জাল ধ্বংস কার্যক্রম চলছে। তবে কতসংখ্যক জেলেকে এ পর্যন্ত আটক করে জেল-জরিমানা করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারে নাই তিনি।
শিবচর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা জানান, জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা মাঝেমধ্যেই নদীতে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার জন্য অভিযানে নামে। তাদের চাহিদামতো আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করি। পুলিশের কোনো লোক জব্দকৃত মাছ নেয় না বলে তিনি দাবি করেন।
মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার জানান, কয়েকদিন ধরেই আমরা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। অভিযানকালে জালে জড়িত জীবিত মাছ আমি পানিতে ছেড়ে দেই।