সেখানে পুরুষ, মহিলা ও শিশু রয়েছে। সংসারের যাবতীয় জিনিস নিয়ে তারা জীবন ও জীবিকার সন্ধানে যাচ্ছেন। শিশুরা মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে। দুজন কিশোর তারাও একে অপরের হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। খুব অল্প বয়সে সংসার নামক এই বিশাল চাপ তাদের কাঁধে ভর করেছে আর ক্লান্তিতে পড়ে আছে নিষ্পাপ শরীরগুলো। লোভ সামলাতে না পেরে তাদের রাজি করিয়ে উঠে পড়লাম ট্রাকে।

আমাদের দেশে আয়ের পথ টেকসই নয়, তাই তারা ছুটে চলেন এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। জীবিকার তাগিদেই ভুলে থাকতে হয় জীবনের সুরক্ষা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা। এভাবেই প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চলছে ট্রাক-পিকআপচালক ও হেলপারদের জীবন। বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবেই নিরন্তর চলে তাদের জীবনযুদ্ধ।

তারা ১৬ জনের একটা দল। তারা দাদনে খাটেন। গত বছর তাদের দাদন দিয়ে রাখা হয়েছে, তাই সিজন শুরু হওয়ার আগেই ভাটায় যেতে হচ্ছে। খোলা কাগজের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই দলের প্রধান মোহাম্মদ আলীর কথা হয়। তিনি জানান, যশোরের নোয়াপাড়া থেকে তারা এসেছেন।

গতকাল রাত ৯টায় ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় এই ট্রাকে রাত ১২টায় জমিদার ব্রিজ এলাকায় এসে জ্যামে পড়েছেন। তারা বলেন, ‘সকাল ৬টা বাজে, এখন পর্যন্ত এটুকু পথ এসেছি। অথচ রাতেই আমরা চলে যেতে পারতাম।’ তারা আরও বলেন, ‘সারা রাত এখানে টাকার খেলা চলে। পুলিশকে টাকা দিলেই আগে যেতে দেয়, আমাগের তো টাকা পয়সা নাই। তাই দেরি হচ্ছে।’‘কী কাজ করেন, কোথায় কাজ করেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে জানান তারা ইটের ভাটায় কাজ করেন।

তিনি বলেন, ‘গত বছর কাজ শেষে মালিক দাদন (অগ্রিম টাকা) দেয় যাতে পরের বছর আবার তার ভাটায় কাজ করি। দীর্ঘদিন কাজ করতে ও থাকতে হয় বলে পরিবার নিয়ে এসেছি। ধামরাই একটি ভাটায় কাজ করি। ছোট ছেলেটা কাজ করে, আবার ওর মাও এখানে কাজ করে। ছোট মেয়েটি সবার জন্য রান্নাবান্না করে।’

অল্প বয়সে বাচ্চাদের দিয়ে কাজ ও পড়াশোনা করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা দিয়ে কি হবে? আগে পেট তারপর পড়াশোনা। পেটতো পড়াশোনা মানে না সে শুধু খাবার চায়।’