ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সীমাহীন ভোগান্তি

সিরাজুল ইসলাম, গোয়ালন্দ
🕐 ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সীমাহীন ভোগান্তি

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহনের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট ও ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত বাংলাদেশের ব্যস্ততম নৌরুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথ। পানির গভীরতা কমে নৌ চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর ও নাব্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলোকে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয় আর সময় লাগে বেশি।

শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ি ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ঐ ঘাটের গাড়ি দৌলতদিয়া নৌরুটে পার হচ্ছে। এর ফলে প্রায় প্রতিদিন গাড়ির দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পূজার ছুটির কারণে পাটুরিয়া ঘাটে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। অন্যদিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় ফেরি লোড ও আনলোড করতে সময় লাগছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নৌ-অভ্যন্তরীণ সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসির) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের কাছে গত কয়েক দিন ধরে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা সংকট নিরসনের জন্য ড্রেজিং করে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। নাব্য সংকটে ফেরিগুলোর পন্টুনে ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে। প্রায়শই পন্টুনের দুই-একটি পকেট বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এ ছাড়া পানি কমার কারণে পন্টুন কয়েক দিন পর পর নিচের দিকে সরানো হচ্ছে। এতে ফেরিতে গাড়ি ওঠা নামার কাজ ব্যহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে সাতটি বড় রো রো ফেরি এবং ১১টি ছোট ইউটিলিটি ফেরি। সাতটি ঘাটের মধ্যে পাঁচটি ঘাট সচল রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ও ৭ নং ঘাট বড় রো রো ফেরির জন্য এবং ৩, ৪ ও ৬ নং ঘাট ছোট ফেরির জন্য। ১ ও ২ নং ফেরিঘাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পদ্মায় বিলীন হওয়ার পর আর ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়নি। রো রো ঘাটে তিনটি করে পকেট রয়েছে ও ইউটিলিটি ঘাটে মাত্র একটি করে পকেট রয়েছে। অর্থাৎ ইউটিলিটির তিনটি ঘাটে মাত্র তিনটি পকেটে তিনটি ফেরি ভিড়তে পারে। ফেরির সংখ্যা অনুযায়ী ঘাট সংকটের কারণে মাঝেমধ্যে অনেক ফেরি ঘাট না পেয়ে ঘাটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

সরজমিনে গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় শত শত যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকা থাকতে দেখা গেছে। এতে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় পর্যন্ত সারে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় দীর্ঘ যানবাহনের যানজট সৃষ্টি হয়।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের বহরে ছোট-বড় মিলে মোট ২০টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান নামের দুটি ফেরি বিকল হয়ে আছে। পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় ওই ফেরি দুটির মেরামত কাজ চলছে। প্রতিটি রো রো (বড়) ফেরি চলাচলের জন্য কমপক্ষে ৮ ফিট পানির গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু নৌ-চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরের পাশাপাশি নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া উভয় ঘাটের বেসিন চ্যানেলে এখন নাব্যতা সংকট সবচেয়ে বেশি। পানির গভীরতা না থাকায় বড় ফেরিগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মুখে চলাচল করছে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রয়োজনীয় ঘাট সংকট, ঘন ঘন ফেরি বিকল ও নাব্যতা সংকটের কারণে নৌপথে স্বাভাবিক ফেরি পারাপার ব্যহত হচ্ছে। ফলে এই নৌপথ পার হতে এসে গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটেই পড়ে থাকছে। ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় বাসের যাত্রী, চালক, মুমূর্ষু রোগী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসময় বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাস্তার পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গর্ত করে রেখেছে, সেই গর্তে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সের চালক খোলা কাগজের সাথে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, দেশের ব্যস্ততম এই সড়কে জরুরি রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা কোন রাস্তা নেই। এভাবে কতক্ষণ থাকা যায় বলেন। এসময় রোগীর সঙ্গে আসা তার ভাই কবির হোসেন বলেন, দুপুরের মধ্যে অপারেশন করাতে হবে। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেতে না পারি কত খারাপ অবস্থা হবে ভাবতে পারছি না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কার্যালয় (বিআইডাব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করছে ১৮টি ফেরি। ঘাট চালু আছে ৪টি। আমরা চেষ্টা করছি যানবাহনের দীর্ঘ সারি ঘাট এলাকায় যেন না থাকে। গাড়িগুলো দ্রুত পারাপার করতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি।

 
Electronic Paper